Importance of Professionalism for All

Importance of Professionalism for All

 

ভিক্ষুক থেকে শুরু করে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল ব্যক্তির কাছে একটা সম্পদ সমপরিমাণে আছে। সেটা হচ্ছে সময়! যে এই সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারছে সে-ই সফল হচ্ছে আর বাকিরা পারছে না। আমরা সবাই জানি সময় একটি অমূল্য সম্পদ, আমরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই পৃথিবীতে এসেছি। আমাদের কার হাতে কতটা সময় আছে কেউ জানি না। সময়ের সঠিক ব্যবহার না করলে ইহকাল পরকাল কোথাও সফলতা পাওয়া যাবে না জানা সত্ত্বেও আমরা মানছি না, সিরিয়াস হচ্ছি না।

কিন্তু কেন?

এর কারন হল আমরা ভবিষ্যৎতের পরিণাম উপলব্ধি করতে পারি না। একটা কাজ একদিন আটকে রাখলে পরদিন তার খারাপ প্রভাবটা এত ক্ষুদ্র হয় যে আমরা সেটা অনুভবই করি না। আমরা ভুলে যাই যে অল্প অল্প করে খারাপ প্রভাবগুলো আমাদের উপরই পরছে। এবং এর পরিমাণ চক্রবৃদ্ধির হারে বাড়ছে। আজকের এই ক্ষুদ্র প্রভাব আগামীকাল তার দ্বিগুণ হয়ে যাবে, তারপরদিন চার গুণ, পরের দিন আঁট গুণ আর এভাবে চলতেই থাকবে…

একবার ভাবুন তো! আজকে একবার ধূমপান করার পর আগামীকাল সকালে যদি আপনি গলায় ক্যন্সার নিয়ে ঘুম থেকে উঠেন, তাহলে কি আপনি আর কখনো ধূমপান করতেন? পৃথিবীর কেউ কি তখন ধূমপান করতো? কিন্তু বাস্তবে, একবার ধূমপান করলে তার প্রভাব এতোটাই ছোট হয় যে, আমাদের চোখেই পরে না। তবে ভুলে গেলে চলবে না যে, ধীরে ধীরে সেই ক্ষুদ্র প্রভাব ঠিকই ক্যন্সারের দিকে এগিয়ে যায়।

আবার, একদিন ব্যায়াম না করলে কিংবা ফাস্ট ফুড খেলে পরদিন যদি ওজন ৫ কেজি বেড়ে যেতো তাহলে আমরা কখনই ব্যায়াম করতে ভুলতাম না বা অপ্রয়োজনে এতো বেশি ফাস্ট ফুডও খেতাম না।

ঠিক তেমনি ভাবে কোন ভালো কাজ করার পর সেটার তাৎক্ষনিক ফল না পেয়ে আমরা সেই কাজটা আর করি না। আমাদের মনে রাখা উচিৎ, ভালো কাজের ফল অবশ্যই আসে এবং সেটা যত দেরি করে আসে তত বড় হয়ে আসে। কারন এখানেও প্রভাবটা চক্রবৃদ্ধির হারে হয়। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন “চক্রবৃদ্ধির হার পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য” – যে এর শক্তি সম্পর্কে অবগত এবং এই শক্তির সঠিক ব্যবহার করতে পারে তার সফলতা নিশ্চিত।

সময়ের কাজ সময়ে না করা, ফাঁকি দেওয়া, অজুহাত দেখানো, নিজের কাজে কার্পণ্য করা এসবের ফল যদি আপনি আজকে অনুভব না করতে পারেন তাহলে মনে রাখবেন একদিন এই ছোট ছোট প্রভাব গুলোই ক্যান্সারের মতো বড় হয়ে ধরা পরবে যখন আর কোন সমাধান খুঁজে পাবেন না।

আমরা অনেকেই নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে উদাসীন। সিনিয়র হওয়ার পর আমাদের মধ্যে কাজ করার স্পৃহা কমে যায়। অনেক সময় খুব ছোট একটা কাজ যা হয়তো ৫ মিনিট সময় দিলেই শেষ হয়ে যায় সেটাকে আমরা দিনের পর দিনে পার করেও শেষ করতে পারি না। এরকমটি কখনই কাম্য নয়। কাজ জমিয়ে রাখলে সেটি ভবিষ্যতের জন্য বোঝা হয়ে দাড়ায়। সৎউদ্দ্যেশ্য নিয়ে কাজ করলে কোন কাজই বেশি সময় নেয় না। অনেক বেশি কাজ থাকলে সেটা গুরুত্বের ভিত্তিতে সাজাতে হবে। যে কাজটি আগে করতে হবে সেটি আগেই করে নিতে হবে। কাজগুলো লিখে রাখার অভ্যাস গড়লেই এই সমস্যাটি থেকে বের হয়ে আসা যায়।

কোন কাজ শুরু করার পর সেটা কতদিনের মধ্যে শেষ করা যাবে তার একটা সঠিক হিসাব আগে থেকেই করে ম্যানেজমেন্টকে জানাতে হবে। কিংবা ম্যানেজমেন্ট কোন সময় দিলে যেকোনো ভাবে সে সময়ের মধ্যে কাজ করতে হবে। সিনসিয়ারলি কোন কাজ করলে আমরা কখনই সমস্যার সম্মুখীন হব না। অনেক সময় একভাবে চিন্তা করলে কাজ হয় না, নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে কাজ করতে হবে। আমি যেভাবে ভাবছি সেভাবে কাজ না হলে অন্যরা যেভাবে ভাবছে সেভাবে ভাবতে হবে। এতে করে কারো আত্মসম্মান নষ্ট হয় না বরং কাজ শেষ করার পর একটা বিশেষ প্রশান্তি পাওয়া যায়।

আমাদের জুনিয়রদেরকে তাদের কাজে সহায়তা করতে হবে যেন তারা একদিন লিডার হতে পারে। জুনিয়ররা কোন কাজ নিয়ে আসলে আমরা অন্যদের কাছে রেফার করে দেই। এক্ষেত্রে আমাদের রেফার না করে নিজে সেই ব্যাক্তির সাথে করা বলা উচিৎ, এতে করে কাজের গতি অনেক বেড়ে যায়। আবার অনেক সময় কোন ইমেইলের CC তে রাখা হলে আমরা মনে করি ইমেইলটি আমার জন্য না তাই রিপ্লাই দেব না। এটাও ভাবা ঠিক না, CC তে যাদের রাখা হয় তাদের প্রত্যেকেরই উচিৎ রিপ্লাই করা কিংবা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা।

বিভিন্ন ইভেন্টে আমরা নির্দেশনা গুলো শুধু শুনে যাই। ইভেন্ট শেষ হলে সেগুলো আর ফলো করি না। এরকম হলে ইভেন্ট গুলোর তাৎপর্য নষ্ট হয়। ইভেন্টে শুধু পরিকল্পনা করা হয়, কিন্তু পরিকল্পনা তো আমাদের মূল লক্ষ্য নয়। পরিকল্পনার পরে সেই কাজটি সম্পূর্ণ করার দায়িত্বও নিতে হবে। কোন কাজ দেওয়া হলে সেটি শেষ হওয়া পর্যন্ত নজর রাখতে হবে, শেষ না হলে সময় সহ কোম্পানির সকল সম্পদের অবচয়ের ভার আমাদের নিজেদের কাঁধেই এসে পরবে। ঠিক সেরকম ভাবে আমরা অপ্রয়োজনে মিটিং করি, সেই মিটিং গুলো কতোটুকু ফলপ্রসূ হয়? প্রযুক্তির এই যুগে সময় নষ্ট করে ফিজিক্যাল মিটিং না করে ভিবিন্ন মেসেঞ্জার কিংবা ফোনে কনফারেন্স কলের মাধ্যমে করলে অনেক কম সময়ে কার্যকরী মিটিং করা সম্ভব।

অজুহাত, নিজের ভুলের জন্য অন্যকে দায়ি না করে আমরা যদি নিজের দায়িত্ব নিজে নেই তাহলে আমরা অনেক বেশি ইফেক্টিভ হতে পারবো। খেয়াল করে দেখবেন ভালোভাবে কাজ করলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। রাতে ঘুমানোর আগে যদি দেখেন আজকে গতকালের চাইতে বেশি কাজ করেছেন তখন আপনি গতকালের চাইতে বেশি প্রশান্তি অনুভব করবেন। আর ভালো কাজ করলে শুধু ইহকাল নয় পরকালেও তার ফল পাওয়া যায়।

আমাদের রিজিকের মালিক আল্লাহ্‌, এটা নিয়ে ভাবার দরকার নেই। কিন্তু মানসিক প্রশান্তি, ইহকাল এবং পরকালের সুখ এবং ভালো কাজের ফল হিসেবে অন্যের দোয়া টাকা পয়সা আর বড় নামের চাইতে কম কিসে?

আবার অনেক সময় আমরা অন্যকে কোন কাজ শিখাই না বা তাদেরকে লিডার তৈরিতে সহযোগিতা করি না। কিন্তু আমাদের ভাবা উচিৎ যে, পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার সময় আমরা কেবল আমাদের “Legacy” রেখে যাবো। এই “লেগেসি” তৈরি করে রেখে যেতে হবে, না হয় আমাদের অনেক অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার মতো কেউ থাকবে না।

তাই “লেগেসি” তৈরি করুন আর ছোট প্রভাবকে অবহেলা করবেন না! মনে রাখবেন সফলতা বড় কাজ থেকে আসে না, বরং ছোট ছোট কাজের সমন্বয়ে আসে।

কারন “ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তুলে মহাদেশ, সাগর অতল”

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *