‘শেখ আবু তাহের’ এর মৃত্যুতে আমি নিবেদিত এক সদস্যকে হারিয়েছি…
আমার জীবনের প্রথম নিয়োগকৃত টিম মেম্বার ‘শেখ আবু তাহের’, যিনি আমার ব্যবসা শুরুর প্রথম থেকেই আমার সাথে ছিলেন, তিনি আমাদেরকে ছেড়ে এই পৃথিবী থেকে চলে গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার এই আকস্মিক মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না কিন্তু আমরা জানি নিয়তির বিধানকে আমরা কেউ খন্ডাতে পারবো না। তিনি আজ আমাদের ছেড়ে চলে যাবার পর আমি অনুভব করতে পারলাম যে আবু তাহের সাহেব আমাদের ড্যাফোডিল ফ্যামিলির প্রতি কত বড় অবদান রেখে গেছেন যা আমি কখনই অস্বীকার করতে পারবো না।
এই গোটা লকডাউন সময়টিতে তিনি বাড়িতে তার পরিবারের কাছে না গিয়ে অফিসেই অবস্থান করেছিলেন। কিছুদিন আগে লকডাউন খোলার পর তিনি বাড়িতে ফিরে যান আর এটিই বোধহয় তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। বাড়িতে যাবার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার পূর্বে থেকে ডায়বেটিকস ও কিছুটা অ্যাজমার সমস্যা ছিল। গতকাল সকালে তার শ্বাস-কষ্ট শুরু হলে তাকে চাঁদপুরে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেখানকার কোন হাসপাতাল তাকে ভর্তি করতে চায় না ফলে বাধ্য হয়ে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় কিন্তু ঢাকা আসার পথেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আমি যখন তার অসুস্থতার খবর পাই তখন আমি তার সাথের লোকদেরকে জানাই তাকে ঢাকায় নিয়ে আসতে এবং তার চিকিৎসার জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে, সেই সাথে আমি তাদেরকে এটাও নিশ্চিত করি যে তার যে কোন প্রয়োজনে যেন আমাকে সরাসরি জানানো হয় ও তার চিকিৎসায় যেন কোন প্রকার ত্রুটি না থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে আমি যখন তার মৃত্যুর খবর পাই তখন আমি সাথে সাথে স্তব্ধ হয়ে পড়ি। এমন একজন মানুষের মৃত্যু আমার কাছে কোন ভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না এবং আমি কোন ভাবেই তা মেনে নিতে পারছিলাম না কারণ এই পৃথিবীতে আজকে আমার সফলতার পিছনে থাকা মানুষদেরকে যদি আমার স্বরণ করতে হয় তবে শেখ আবু তাহের নামটি অবশ্যই আসবে এবং আমি তার প্রতি আজীবন ঋণী।
আমি কেন তার প্রতি ঋণী, সেটি চিন্তা করতে গিয়ে আজ যখন তার স্মৃতি রোমান্থন করি, তখন ফিরে যাই সেই সময় গুলোতে যখন আমি আমার প্রথম ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আমার মনে আছে, এরশাদের সময়ে যখন জরুরী অবস্থা ঘোষনা করা হয়েছিল তখন আমি ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। জরুরী অবস্থার কারণে আমি যখন আমার আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম, সেখানেই আমার সাথে পরিচয় হয় তাহের সাহেবের। তিনি তখন মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় চাকরী খুঁজছিলেন। তিনি আমাকে মামা বলে ডাকতেন। যেহেতু ছাত্রজীবন থেকেই আমার পরিকল্পনা ছিল ব্যবসা করার, তাই তিনি আমাকে একদিন বলেছিলেন “যদি কখনো ব্যবসা শুরু করেন, তবে আমার কথাটা একটু খেয়াল রেখেন। আমাকে একটা চাকরী দিয়েন”। সম্ভবত তিনি সেই সময় কথাগুলো আমাকে মজা করেই বলেছিলেন কিন্তু আমি পড়াশোনা শেষ করে যখন ব্যবসায় নামি ও অফিস বুক করি তখন সর্বপ্রথম আমার তার কথাই মনে পড়ে ও আমি সাথে সাথে তার সাথে যোগাযোগ করি। তিনি যখন আমার সাথে দেখা করতে আসেন, আমি তাকে বলি যে আমার একজন সাপোর্টিং মেম্বার লাগবে কিন্তু যেহেতু আমি নতুন ব্যবসা শুরু করছি তাই খুব বেশি বেতন আমি দিতে পারবো না। অফিসে থাকার ব্যবস্থা, খাওয়া ও কিছু পকেট খরচ আমি তাকে দিতে পারবো এবং পরবর্তীতে আস্তে আস্তে বেতন বাড়বে। আমার প্রস্তাব শুনে তিনি কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন এবং সেই দিন থেকেই আমার সাথে কাজে লেগে গেলেন। আমার ঠিক মনে নেই, সেই দিনটি হবে ১৯৯০ সালের মে মাসের কোন একটি দিন এবং ঠিক সেদিন থেকে আজ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩০ বছর তিনি ড্যাফোডিল ফ্যামিলির সাথেই ছিলেন।
তখন আমার অফিসের ঠিকানা ছিল ১০১/এ গ্রিন রোড। সেখান থেকেই তাহের সাহেবকে নিয়ে শুরু হলো আমাদের ড্যাফোডিল এর যাত্রা। তখন আমি ব্যাচেলর হবার কারণে আমার প্রায় গোটা দিনটিই নির্ঘুম কাটতো অফিসে কাজ করতে করতে। আর সেই সময়টিতে আমার সর্বক্ষণের সাথী ছিল তাহের সাহেব। আমার চা খাওয়া, খাওয়া-দাওয়া বা অন্যান্য যে কোন বিষয় নিয়ে আমাকে কখনো চিন্তা করতে হয়নি। প্রতিটি মুহূর্তে এমন কোন সাপোর্ট নেই যা তার কাছ থেকে আমি বা প্রতিষ্ঠান পায়নি। তিনি তার চাকরীর প্রথম দিন থেকেই অফিসেই ঘুমাতেন এবং তখন থেকে এই ৩০টি বছর তিনি অফিসেই কাটিয়েছেন। অফিসই ছিল তার কাছে বাসা। তিনি যে তার ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবেন, এমন কোন চিন্তাই কখনো তার মাথায় আসেনি। আমি নিজেই কয়েকবার তাকে বলেছিলাম ফ্যামিলি নিয়ে থাকতে কিন্তু তিনি উত্তরে শুধু আমাকে একটি কথাই বলেছিলেন যে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অফিসেই থাকতে চান। আল্লাহ তার এই ইচ্ছাটি কবুল করেছেন। আমার মনে আছে, ১৯৯২ সালের শেষের দিকে যখন আমি একটি ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই তখন আমি বেশ কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। ঠিক সেই সময় আমার অনেক টিম মেম্বার ড্যাফোডিল ছেড়ে চলে যায়। আবার তখন অনেকে ছিল যারা আমাকে ছেড়ে যায়নি এবং আজ পর্যন্ত তারা ড্যাফোডিল ফ্যামিলির সাথেই রয়েছে। তাহের সাহেব ছিলেন তাদেরই একজন। সেই সময়টিতে আমি একবার তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তিনিও ড্যাফোডিল ছেড়ে চলে যাবেন কিনা। জবাবে তিনি বলেছিলেন, এই প্রতিষ্ঠানেই তিনি তার জীবনের শেষ পর্যন্ত কাটিয়ে দিতে চান। ঠিক একই কথা তিনি ১৯৯৮ সালের কোন একটি দিনেও কথা প্রসংগে আমাকে পুনরায় বলেছিলেন। যাইহোক, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তাহের সাহেব আমাদের সাথে থাকতে থাকতে কখন যে আমাদেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছেন সেটি কখনো অনুভবই করিনি; কিন্তু আজ তিনি চলে যাবার পর বুঝতে পারছি কতটা শূণ্যস্থান সৃষ্টি হয়েছে তার মৃত্যুতে।
তাহের সাহেবের সাথে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ‘ড্যাফোডিল কম্পিউটারস’ এর বার্ষিক সাধারণ সভায় (AGM) তিনি কোরান তেলাওয়াত করতেন। তিনি যেহেতু মাদ্রাসায় পড়েছেন তাই আমরা যখন নামাজে দাঁড়াতাম তিনিই ইমামতি করতেন। তাহের সাহেব যখন তার ছেলেকে চাঁদপুর স্কুলে ভর্তি করান, তখন তিনি আমার কাছে এসেছিলেন পরামর্শ করার জন্য এবং আমিও তখন তাকে নিশ্চিন্ত করি যে তার ছেলেকে আমরা দেখে রাখবো। তিনি তার বড় মেয়ের বিয়ের সময় আমার কাছে আসেন তার মেয়ের বিয়ের আমন্ত্রন জানাতে। দুর্ভাগ্যবশত বিয়ের তারিখে আমার দেশের বাহিরে একটি জরুরী প্রোগ্রাম থাকায় আমি তার মেয়ের বিয়েতে উপস্থিত হয়ে তার অনুরোধ রাখতে পারিনি কিন্তু আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি তার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে আমার সকল প্রকার দ্বায়িত্ব পালন করতে। আমার সকল পুরনো বন্ধুরা তাহের সাহেবকে চিনতো। তারা যখনই আমার সাথে দেখা করতে আসতো; তারা সর্বদা তাহের সাহেবের কথা জিজ্ঞেস করতো যে, তিনি এখনো ড্যাফোডিলে আছেন কিনা। মনে পড়ে যেদিন আমরা অনেক বড় আয়োজন করে ড্যাফোডিল ফ্যামিলির যাত্রা শুরু করি, তখন প্রথম ‘ফ্যামিলি ডে’ তেই আমি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আমাদের প্রতিষ্ঠানের যারা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় টিম মেম্বার, তাদেরকে নানান রকম উপহার দিয়েছিলাম। তাহের সাহেবকে আমরা উপহার হিসেবে প্রতিষ্ঠান থেকে পবিত্র হজ্বে পাঠিয়েছিলাম। আল্লাহর প্রতি প্রার্থনা করছি, তিনি যেন তাহের সাহেবের হজ্বটি কবুল করে নেন এবং সেই সাথে আল্লাহ যে আমাকে এত বড় একটি অমূল্য সুযোগ দান করেছিলেন তাহের সাহেবকে হজ্বে পাঠানোর, সেই জন্য আল্লাহর নিকট আমি শোকরিয়া আদায় করছি।
আজ তাকে নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে হঠাৎ করেই মনে একটি খেয়াল আসলো যে, আমি কেন তাকে নিয়েই আমার প্রথম ব্যবসা শুরু করেছিলাম। কি এমন ছিল তার মধ্যে? তাহের সাহেবের ব্যবহার খুব ভাল ছিল। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম ও আত্মীয়ের বাসায় এসেছিলাম, তিনি ছিলেন আমার থেকে বয়সে ২/৩ বছর বড় কিন্তু তবুও আমার প্রতি তার ব্যবহার ছিল অত্যন্ত অমায়িক। তিনি খুব সহজ সরল ও হাসি খুশি মানুষ ছিলেন। তার চাহিদাও ছিল খুব অল্প এবং অল্পতেই খুশি থাকার এক অসাধারণ গূণ ছিল তার। ‘ড্যাফোডিল কম্পিউটারস’ এর প্রত্যেকের নিকট তিনি ছিলেন একজন গার্জিয়ান যিনি সকল বিপদে আপদে সবাইকে দেখে রাখতেন। আমার মনে আছে তিনি আমার সাথে অফিসে খুব কমই দেখা করতে আসতেন। হয়তো ২/৩ বছরে এক বার দেখা করতেন আর এখন যেহেতু আমি ‘ড্যাফোডিল কম্পিউটারস’ এ বসি না তাই তার সাথে আমার তেমন একটা দেখাও হত না। ঠিক ৪/৫ মাস আগে তার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল। তিনি আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি আমার সামনে সর্বদাই বেশ লাজুক আর হাস্যজ্জল থাকতেন। ঐ দিন আমি তাকে দেখে বেশ জলি ভাবেই বলেছিলাম, “কি তাহের সাহেব, কেমন আছেন?” তিনিও বেশ অমায়িকভাবে উত্তর দেন, “জ্বী স্যার ভালো। আপনি ভালো আছেন?”। আমি ফের তাকে বলেছিলাম, “আপনি আমার সাথে এত লজ্জা পান কেন? তাহের সাহেব, আপনি আর আমি কিন্তু এক সাথেই শুরু করেছিলাম। আপনার সাথে আমার অনেক স্মৃতি”। এই কথা শুনে তিনি শুধু হেসে বলেছিলেন, “থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ”।
তাহের সাহেব এমনই এক মানুষ ছিলেন যে তিনি আমাদের সাথে যোগদানের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমাকে কখনই ‘ড্যাফোডিল কম্পিউটারস’ এর সিকিউরিটি নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি বা এ নিয়ে আমি কাউকে কখনো কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করিনি শুধু মাত্র তাহের সাহেবের সততা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার ভালবাসার কারণে। আমরা সব সময় নিশ্চিন্ত ছিলাম এই ভেবে যে, তাহের সাহেব তো আছেন। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীর সাথে কথা বলতে গিয়ে জানলাম, তার পরিবার খুব চেয়েছিল যে তাহের সাহেব যেন ঈদে বাড়িতে যান এবং তাকে যখন ফোন করে বাড়িতে আসতে বলা হয় তখন তিনি শুধু বলেছিলেন যে অফিসের সব স্টাফরা ছুটিতে বাড়িতে আছে। অফিসে কেউ নেই তাই তিনি কিভাবে অফিস খালি রেখে চলে যাবেন? এই কারণে তিনি নিজে দ্বায়িত্ব নিয়ে অফিসে থেকে গেছেন অফিসের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে। একজন মানুষের কাছে তার পরিবারের থেকে দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য যে কতটা বড় সেটি তাহের সাহেবকে দেখে আমরা বুঝতে পারি। তাই আজ তার এই সকল স্মৃতি ও অবদান গুলো নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে আমি আমার মনে জেগে ওঠা প্রশ্নটির উত্তর পেয়ে যাই যে, কেন আমি তাকে আমার জীবনের প্রথম টিম মেম্বার হিসেবে নিয়োগ করেছিলাম।
তার মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই অনেককে দেখলাম আমাকে মেসেজ পাঠাতে, ফেসবুকে তাকে নিয়ে লিখতে, ছবি পোস্ট করতে ইত্যাদী। কিন্তু আমার একবারও মনে হয়নি যে আমিও অন্যদের মত ফেসবুকে তাকে নিয়ে কিছু পোস্ট করি। আমার প্রথমেই মনে হয়েছে এমন অবস্থায় আমার প্রথম দ্বায়িত্বটা কি? আমার এই মুহূর্তে এখন ঠিক কি করা উচিত? অতঃপর তার মৃত্যুর খবর শোনার সাথে সাথে আমি তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে খোঁজ নেই যে তাহের সাহেবের এখন বর্তমান অবস্থান কোথায় ও তার সাথে তার পরিবারের কে কে আছে। জানতে পারলাম তার স্ত্রী সাথেই আছেন। তারা তখন তাহের সাহেবকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন। আমি তার স্ত্রীর সাথে ফোনে কথা বললাম, তাকে স্বান্তনা দিলাম। তাহের সাহেবের ছেলে-মেয়েদের খোঁজ খবর নিলাম। আমি তার স্ত্রীকে নিশ্চিন্ত করলাম যে, যেহেতু তার ছেলেটি আমাদের প্রতিষ্ঠানেই আছে, সুতরাং আমি যতদিন বেঁচে আছি ও ড্যাফোডিল যতদিন টিকে আছে, ইনশাল্লাহ তার ছেলেকে আমরা দেখবো ও ভাল করে পড়াশোনা করাবো।
তারপর একজন মুসলমান হিসেবে আমি আমার যে দ্বায়িত্ব, সেটি পালন করলাম। আমি ২ রাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করলাম এবং আমরা যে তার মত একজন সৎ ও সুন্দর মনের একটি মানুষকে আমাদের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে পেয়েছি তার জন্য আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করলাম। সেই সাথে আল্লাহর কাছে নিজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলাম কারণ একজন মানুষ আমার সাথে তার জীবনের দীর্ঘ ৩০ বছর কাজ করেছে, এই সময় গুলোতে হয়তো আমি নিজের অজান্তেই তার সাথে অনেক ভুল করেছি, অনেক সময় চাইলেও ভাল ব্যবহার করতে পারিনি, হয়তো আমার কোন কথা বা কাজে তিনি মনে কষ্ট পেয়েছেন কিন্তু প্রকাশ করেননি। যেহেতু আজ তার কাছে আমার ক্ষমা চাওয়ার কোন সুযোগ নেই, তাই আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন সেই সাথে তিনি যেন আবু তাহেরের সকল দোষ ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে তাকে বেহেশত নসিব করেন।
অবশেষে বলতে চাই যে মানুষ হিসেবে আমাদের নিজ নিজ যে দ্বায়িত্বগুলো আছে সেগুলো আমাদেরকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করা উচিত। তাহের সাহেব যত দিন আমাদের মাঝে বেঁচে ছিলেন তিনি তার ৩০ বছরের প্রফেশনাল লাইফের একটি দিনও দ্বায়িত্বে অবহেলা করেননি। যার কারণে তিনি তার মৃত্যুর পরেও আমাদের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকবেন। তিনি তার কাজের প্রতি দ্বায়িত্বশীল ছিলেন বিধায় আমিও তার প্রতি আমার দ্বায়িত্ব ও কর্তব্যে অটল থেকেছি। আমি এখন সকলের উদ্দেশ্যে তাহের সাহেবকে নিয়ে লিখছি কিন্তু তার আগে আমি আমার দ্বায়িত্বগুলো পালন করেছি। তার পরিবার, ছেলে-মেয়ে ও তার মৃত্যু পরবর্তী সকল প্রকার অফিশিয়াল দায়-দ্বায়িত্ব সম্পর্কিত আমার যা যা করণীয়, আমি তা আমার সাধ্য মত করেছি। তাই সকলের উদ্দেশ্যে আমার শুধু একটি কথাই বলার আছে, প্রযুক্তির এই যুগে আমরা যত আপডেট ও আপগ্রেড হচ্ছি, আমরা ততই অনুভূতিশূণ্য হয়ে পড়ছি। আমরা আজ ভুলতে বসেছি আমাদের প্রিয় ও কাছের মানুষদের প্রতি আমাদের দ্বায়িত্ব-কর্তব্যের কথা। তাই যারা আমাদের সাথে আছেন তারা যেন ভালো থাকেন এবং যারা আজ আমাদের সাথে নেই তাদের পরিবার যেন ভালো থাকে, সেই চেষ্টাতেই যেন আমরা কাজ করে যাই, সকলের প্রতি এই হোক আমার প্রত্যাশা।