Think of your work as worship in order to succeed
এই পৃথিবীতে দুই ধরণের মানুষ আছে। প্রথমত, যারা ভাগ্যে বিশ্বাস করে ও সব কিছু ভাগ্য বা অদৃষ্টের উপর ছেড়ে দেয় এবং দ্বিতীয়ত যারা কর্মে বিশ্বাস করে ও কাজ করে নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই গড়ে নিতে চায়। আমরা জানি, দিন শেষে জীবনে সাফল্যের মুখ দেখতে সক্ষম হয় এই কর্মে বিশ্বাস করা পরিশ্রমী মানুষ গুলোই। মানুষের জীবনে কর্মের ভূমিকা অপরিসীম। যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর ইতিহাসে যত মনীষীরা অমর হয়ে বেঁচে আছে, তারা সকলের বেঁচে আছে তাদের কর্মের জোরে। মানুষের কর্মই তাকে বাঁচিয়ে রাখে যুগের পর যুগ। সৎ কর্ম ও অসৎ কর্ম উভয়ই। যেমন, হিটলার ও মাদার তেরেসা দুজনেই ইতিহাসে অমর হয়ে আছে তাদের কর্মের জন্য এবং আজীবন অমর হয়েই থাকবে। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে হিটলারকে মানুষ আজীবন ঘৃণাভরে মনে রাখবে ও মাদার তেরেসাকে মনে রাখবে শ্রদ্ধার সাথে। সুতরাং একটি মানুষের মৃত্যুর পর তাকে পৃথিবী কোন নজরে দেখবে সেটাও নির্ভর করে তার কর্মের উপর।
পৃথিবীর সকল ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থও বলে গেছে মানুষের কর্ম ও তার গুরুত্বের কথা সম্পর্কে। মানুষের কর্ম হচ্ছে তার এক ধরনের ইবাদত ও আরাধনার মত। মানুষের কর্মস্থল হচ্ছে তার জন্য একটি পবিত্র জায়গা কারণ এখান থেকেই তার রুটি-রুজির সংস্থান হয়। তাই প্রতিটি মানুষের তার কর্ম ও কর্মস্থলে সৎ থাকাটাও সৃষ্টিকর্তার প্রতি এক ধরনের ইবাদতের সমতুল্য। অনেকেই আছে যারা অসৎ উপায়ে টাকা রোজগার করে, অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা ক্রেতাদের ঠকিয়ে টাকা আয় করে, অনেক অফিসের কর্মচারীরা আছে যারা অফিসে তাদের কাজটি ঠিক ঠাক পালন করে না ও কাজে ফাঁকি দেয়। এগুলো সব কিছুই প্রতারণা। এ প্রতারণা শুধু মানুষের সাথে নয় বরং সৃষ্টিকর্তার সাথেও প্রতারণা। কারণ সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সকল প্রকার বিদ্যা-বুদ্ধি, জ্ঞান ও শারীরীক ক্ষমতা দিয়েছেন সৎ পথে আয় করতে ও মানুষের সেবা করতে। কিন্তু সেই সকল ক্ষমতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আজ অনেকেই লোভের পথে পা বাড়িয়ে দেশের ও দশের ক্ষতি করছে।
আগেই বলেছি মানুষের কর্মস্থান ঐ মানুষের জন্য অনেক পবিত্র একটি জায়গা তাই এখানে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করা প্রতিটি মানুষেরই নৈতিক দ্বায়িত্ব। সকলকে মনে রাখতে হবে যে কেউ যদি তার কাজে ফাঁকি দেবার চেষ্টা করে বা কোন ধরণের অসততার পথ বেছে নেয় তবে মূলত সে তার কর্মস্থানেরই ক্ষতি করছে যার ফল ভবিষ্যতে তাকেও ভোগ করতে হবে। মানুষকে ঠকিয়ে ও কাজে ফাঁকি দিয়ে কেউ কখনো বড় হতে পারে না। এ কাজ দ্বারা কেউ সাময়িক মুনাফা অর্জন করতে পারলেও সেটি কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কোন না কোন একটি সময় তার পতন হবেই।
হিংসা ও ঈর্ষা প্রায় প্রতিটি মানুষেরই চরিত্রের একটি অংশ। এর সর্বাধিক উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায় মানুষের কর্মস্থানে। ব্যবসা হোক বা চাকরী, নিজের পাশের মানুষটিকে নিজের থেকেও ভাল অবস্থানে পৌছাতে দেখে প্রায় সব মানুষেরই মনে হিংসা ও ঈর্ষার জন্ম নেয়। কোন কোন দিক থেকে ঈর্ষা করা ভাল যদি তা নিজেকে উন্নত করার জন্য হয় তবে। অর্থাৎ আমার পাশের ব্যবসায়ী বা Colleague যদি আমার থেকেও ভাল অবস্থানে পৌছে যায় তবে তাকে ঈর্ষা করে যদি আমি আমার নিজের Skill গুলোকে আরো বেশী Develop করে আরো কঠোর পরিশ্রম করতে পারি তবে অবশ্যই আমি সেই ব্যক্তির থেকেও আরো বড় অবস্থানে পৌছাতে পারবো। এই ধরণের গঠনমূলক ঈর্ষা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। কিন্তু আমি যদি হিংসার বশবর্তী হয়ে সেই ব্যক্তিকে দমানোর জন্য তার ক্ষতি করে তার অবস্থানটি কেড়ে নেই তবে সেটি মোটেও গ্রহণযোগ্য হবে না। এই ধরণের হিংসাকে কখনোই কোন ধর্ম সমর্থন করে না এবং এভাবে মানুষের ক্ষতি করেও কখনো জীবনে দীর্ঘমেয়াদী উন্নতি করা যায় না।
মাঝে মাঝেই দেশ ও জাতির সামনে বড় বড় সংকটময় পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে যখন সকল মানুষকে এক জোট হয়ে কাজ করতে হয়। উদাহরণ স্বরূপ রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক মন্দা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগের প্রাদুর্ভাব, মহামারী ইত্যাদী। এক সময়টাতে একটি নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী ও কর্মী সমাজকে দেখা যায় যারা এই চরম সময়ের সুযোগ নিয়ে নিজেদের আখের গোছানোয় ব্যস্ত থাকে। ব্যবসায়ীরা এই সময়টিতে জিনিসপত্রের অবৈধ মজুদ, দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়ানো সহ নানান প্রকার অসৎ পন্থা অবলম্বন করে আর বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা এই সুযোগে অফিস বন্ধের অজুহাতে তাদের নিজ নিজ কাজ কর্মের প্রতি উদাসীনতা দেখানো শুরু করে। যার ফলে ভুগতে হয় গোটা দেশকে। কিন্তু এদের সকলকে মনে রাখতে হবে, এরা কেউ দেশ ও সমাজের বাহিরের কেউ নয়। তাদের কৃত কর্মের ফল যদি দেশ, সমাজ ও কোম্পানীতে প্রভাব বিস্তার করে তবে সেই প্রভাব থেকে তারাও বাঁচতে পারবে না। একটি সময় তাদের উপরও তাদের কৃত কর্মের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো আসা শুরু করবে যখন তাদের নিজ নিজ কোম্পানী গুলো বন্ধ হয়ে যাবে ও দেশে চূড়ান্ত অরাজকতা সৃষ্টি হবে। তাই যে কোন সংকটময় মূহুর্তে শুধু মাত্র নিজের চিন্তা না করে নিজের দেশ, সমাজ ও প্রতিষ্ঠানের সার্বিক মঙ্গল চিন্তা করে যদি সকলে তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে সততার সাথে কাজ করে যায় তবে ভবিষ্যতে যে কোন কঠিন পরিস্থিতিকে খুব সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব।
সব মিলিয়ে মানুষের কর্ম ছোট বড় যেমনই হোক, সেটি যদি সততা ও নিষ্ঠার সাথে করে যাওয়া যায় তবে যে কারো পক্ষে সম্ভব নিজের ও নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করা। এ জন্য কোন খারাপ পরিস্থিতিতে শুধু মাত্র নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ না করে সেই পরিস্থিতিকে বদলানোর জন্য করতে হবে কঠোর পরিশ্রম। শুধু পরিশ্রম করলেই হবে না, তার সেই পরিশ্রমটিকে কার্যকর করার জন্যও সর্বাধিক চেষ্টা করতে হবে। কাজ ও পরিশ্রমতো সকলেই কম বেশী করেই থাকে কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি সেই হাসতে পারে, যার কাজ ও পরিশ্রমটি সার্থক হয়। মোটকথা, সকলে যদি তাদের নিজ নিজ কাজকে ইবাদত ও আরাধনার মত করে পালন করে তবেই এক মাত্র সম্ভব কর্মক্ষেত্র থেকে সকল প্রকার অসততা ও অসৎ পন্থাকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা। আর আমাদের উচিত এই লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যেই নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া।