Role of Teachers as Nation Builder

Role of Teachers as Nation Builder

যুগের সাথে সাথে পৃথিবীতে অনেক পেশাই এসেছে এবং বিলুপ্ত হয়ে গেছে কারণ যুগ বদলেছে, সায়েন্স ও টেকনোলজীর উপর মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। মানুষের চিন্তা-চেতনা ও সমাজ ব্যবস্থারও পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু শিক্ষকতা এমনই এক পেশা যা সৃষ্টির শুরু থেকে চলে এসেছে এবং টিকে থাকবে পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত।


আগে আমরা শিক্ষকতা করা মানেই বুঝতাম স্কুল-কলেজে বন্ধ রুমের মধ্যে একদল ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে শিক্ষকের চক দিয়ে লেখালিখি করে পাঠদান করা। ছুটির ঘন্টা বাজলে ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন ছুটে বেরিয়ে যেত ক্লাসরুম থেকে তেমনি শিক্ষকেরাও বেরিয়ে পড়তেন নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে। শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যকার Interaction ছিল খুবই কম। কিন্তু এখন আর সেই যুগ নেই। শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যকার সম্পর্ক শুধুমাত্র ক্লাসরুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ক্লাসের বাহিরেও শিক্ষকদের উচিত এখন কাউন্সিলর, মেন্টর, মোটিভেশনাল স্পিকার ইত্যাদি ভূমিকা পালন করে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের নিজ নিজ ক্যারিয়ার ও লাইফ সম্পর্কে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া। এর ফলে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যকার যে দূরত্বটা সেটা অনেকাংশেই হ্রাস পাবে এবং ছাত্র-ছাত্রীরাও তাদের প্রবলেমগুলো শেয়ারের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের সঠিক সিদ্ধান্তগুলো তাদের শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে গ্রহণ করতে উৎসাহিত বোধ করবে। 


শিক্ষকেরা হচ্ছে জাতির রোল মডেল। একটি সমাজ কতটা আপডেটেড, ডেভেলপড ও স্মার্ট তা নির্ভর করে সেই সমাজের শিক্ষকদের উপর কারণ প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীই তাদের শিক্ষকদেরকে ফলো করে। একজন শিক্ষক কখন ক্লাসে আসছেন, কখন ক্লাস শেষ করছেন, কি ধরণের ড্রেস পরছেন, কিভাবে মানুষের সাথে কথা বলছেন, তার আচার-আচরণ ও স্বভাব-চরিত্র কেমন এই সব কিছুই প্রভাবিত করে তার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে। একজন শিক্ষক ক্লাস-রুমে কিভাবে পড়াচ্ছেন তার থেকেও বেশী গুরুত্বপুর্ণ তিনি মানুষ হিসেবে কেমন কারণ একটি প্রবাদ আমরা সকলেই জানি, “দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য”। একজন শিক্ষক যতই জ্ঞানী হোক না কেন, তিনি যদি মানুষ হিসেবে ভাল না হন এবং তার আচার-আচরণ, ড্রেস-আপ ও সময় জ্ঞান যদি সকলের মাঝে খারাপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তবে তাকে কখনোই যোগ্য শিক্ষকের আসনে স্থান দেয়া যাবে না। একজন যোগ্য ও আদর্শ শিক্ষক সব সময় চেষ্টা করেন তার ক্লাসের সব থেকে দুর্বল ছাত্র/ছাত্রীকে সবল হিসেবে গড়ে তুলতে। ভাল ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নিয়ে ভাল রেজাল্ট বের করে আনার মধ্যে কোন সার্থকতা নেই। সার্থকতা হচ্ছে একটি খারাপ ও দুর্বল ক্লাস থেকে ১০০% সাকসেসফুল রেজাল্ট বের করে আনা। আর এর জন্য শিক্ষকদের উচিত ক্লাসের সব থেকে দুর্বল ছাত্র/ছাত্রীদের Identify করে তাদেরকে স্পেশাল কেয়ার ও কাউন্সিলিং এর আন্ডারে আনা এবং প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের সাবজেক্ট অনুযায়ী প্রাক্টিক্যাল জ্ঞান প্রদান করা যা তাদের কর্মজীবনে কাজে লাগবে। শিক্ষাদান কখনই শুধুমাত্র বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না, এতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা কখনো জানতেই পারে না তাদের নিজ নিজ দক্ষতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে। যার কারণে কর্মমূখী শিক্ষা তাদের জন্য অত্যান্ত জরুরী, সেই সাথে শিক্ষকদের জন্য আরো একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হচ্ছে Self Development। শিক্ষকদের উচিত শুধু মাত্র নিজেদের অ্যাকাডেমিক সিলেবাসের মধ্যে ব্যক্তিগত পড়াশোনা সীমাবদ্ধ না রেখে নিজেদের মনকে উন্মুক্ত করে দেয়া, রিসার্চ, পিএইচডি, পাবলিকেশন্স, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদীর সাথে সম্পৃক্ত থাকা। তাহলে তাদেরকে ফলো করার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরাও উৎসাহিত হবে নিজেদের ক্যারিয়ার ও ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে।

সায়েন্স ও টেকনোলজীর আপডেটের সাথে সাথে এখন শিক্ষকদের শিক্ষাদান পদ্ধতিরও ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ব্লেন্ডেড লার্নিং সিস্টেম, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ব্লগ, ইউটিউব ইত্যাদির মাধ্যমে একজন শিক্ষক চাইলে এখন তার লেকচার ও নলেজ ছড়িয়ে দিতে পারেন সারা বিশ্বে। গোটা বিশ্বই এখন এক বিশাল পাঠশালা যেখান থেকে জ্ঞান অর্জন করার জন্য শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বন্ধ ক্লাসরুম, ব্ল্যাক বোর্ড ও চকের সাহায্যের কোন প্রয়োজনই নেই। ঘরে বসেই শিক্ষকেরা তাদের টিচিংগুলো অনলাইনের মাধ্যমে পৌছে দিতে পারেন সকলের কাছে। একজন শিক্ষক তার নির্ধারিত ক্লাসটি নেবার আগে তিনি নিজে নিজে ক্যামেরার সামনে ক্লাসের টপিকটি নিয়ে আলোচনা করে একটি ভিডিও তৈরী করতে পারেন এবং ভিডিওটি তিনি তার সকল ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মেইলের মাধ্যমে প্রদান করতে পারেন। এর ফলে যদি ঐ শিক্ষকটি কোন কারণে তার ক্লাসটি নিতে না পারেন, তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা ঐ ভিডিওটি দেখেই পাঠের বিষয় সম্পর্কে ধারনা পেয়ে যাবে। অথবা, তারা যদি আগে থেকেই ভিডিওটি দেখে তাহলে তাদের ঐ বিষয়বস্তু সম্পর্কে যে ধারনাটি তৈরী হবে সেটি অনেকাংশে সাহায্য করবে পরবর্তীতে শিক্ষকের নেয়া ক্লাসটির সময় বুঝতে। আর সেই সময় শিক্ষকও পারবেন ছাত্র-ছাত্রীদের ভিডিওটি থেকে শেখা লার্নিং ফিডব্যাক নেবার মাধ্যমে তাদের মেধা ও সিনিসিয়ারিটির মুল্যায়ন করতে। আর এ সব কিছুর জন্য আগে শিক্ষকদের উচিত যুগোপযোগী সকল প্রযুক্তি ও প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান ধারণ করা। 


শিক্ষকেরা কিন্তু শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয় বরং তাদেরকে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেও ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদেরকে জানতে হবে কোন ছাত্র-ছাত্রীদের কোথায় সমস্যা। কেউ মানসিক বা আর্থিকভাবে কষ্টে আছে কিনা। তাদেরকে কাউন্সিল করতে হবে, বোঝাতে হবে, তারা যেন অসৎ সঙ্গে পড়ে বিপথে চলে না যায় সেটার খেয়াল রাখতে হবে। মাঝে মাঝে ছাত্র-ছাত্রীরা নানান সমস্যার কারণে সেমিস্টারের মাঝেই ড্রপ আউট হয়ে যায়। সেই ড্রপ আউট ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করে তাদেরকে নিয়ে বসতে হবে ও তাদের সমস্যা গুলো সমাধানের পথ বের করতে হবে। যদি কোন মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীর আর্থিক কারণে পড়াশোনা বন্ধের অবস্থা হয় তবে তাদের পাশে শিক্ষকদেরই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে কারণ একমাত্র শিক্ষকেরাই জানেন যে কোন ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে কেমন  Potentiality আছে। সেই অনুযায়ী তাদের উচিত ম্যানেজমেন্টকে জানানো যেন ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা করতে পারে আর্থিক ভাবে দুর্বল ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপ বা অন্যান্য উপায়ে সাহায্য করতে। আর এসব কিছুর জন্য শিক্ষকদের সর্বদা সব খানে চোখ কান খোলা রাখার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান ও ম্যানেজমেন্টের সাথেও সব রকম কানেকশন ও সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে কারণ আজকের যুগে যেকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকেরা শুধুমাত্র ফ্যাকাল্টি নয় বরং গোটা ম্যানেজমেন্টের একটি অংশ তাই তাদেরকে সময়মত ম্যানেজমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গুলোও পালন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের নানান রকম অনুষ্ঠান, ইভেন্ট, আয়োজন সব কিছুতেই উচিত শিক্ষকদের অংশগ্রহণ ও প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করা। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের সম্পর্ক আরো গাঢ় ও মজবুত হবে। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠান প্রায়ই ছাত্র-ছাত্রীদের ডেভেলপমেন্টের জন্য নানান রকম সভা, সেমিনার ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে কিন্তু সেখানে দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ খুবই কম। শিক্ষকদের উচিত নিজেদের আগে এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া তাহলে তাদের দেখাদেখি তাদের ছাত্র-ছাত্রীরাও উৎসাহিত হবে অংশগ্রহণ করতে। পাশাপাশি শিক্ষকেরা গাইডলাইন দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারাই এ সকল অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারে। প্রতিষ্ঠানের বড় বড় ইভেন্ট ও অনুষ্ঠান গুলো যদি ছাত্র-ছাত্রীরা মিলে পরিচালনা করে তাহলে তাদের নিজেদের প্রতি কনফিডেন্স লেভেল বৃদ্ধি পাবে এবং তারা আরো বেশি করে এমন বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে আগ্রহী হবে। 


অবশেষে, আমি সকল শিক্ষকদের প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই, এখনই সময়, আপনারা নিজদেরকে ডেভেলপ ও আপডেট করুন। কারণ আপনারা নিজেরা ডেভেলপড হলেই দেশ ও জাতি ডেভেলপড হবে। শিক্ষকতা একটি মহান ও পবিত্র পেশা। আল্লাহপাক আপনাদেরকে এই পেশায় নিযুক্ত করেছেন তার মানে তিনি আপনাদেরকে সর্বোচ্চ সম্মানিত আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন তাই আপনাদেরও উচিত এই সম্মানের যথাযত মর্যাদা রেখে নিরলসভাবে মানুষের কল্যানে কাজ করে যাওয়া।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *