Are people born with the qualities of Entrepreneurship?
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে একজন উদ্যোক্তা কিভাবে হওয়া যায় বা উদ্যোক্তা হতে কি কি বিষয়গুলোর প্রয়োজন হয় ? উদ্যোক্তা হওয়া কি এতই সহজ ? মোটেই না। আপনি যদি উদ্যোক্তা হবার যাত্রায় নামতে চান তবে প্রথমেই মনে রাখবেন যে এটি নিঃসন্দেহে একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আর এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে নিজের ব্যক্তিত্বের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বৈশিষ্ট্যগুলোকে খুঁজে বের করে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি অনুযায়ী সেগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।
এখন আমরা যদি উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিত্বের এই বৈশিষ্ট্যগুলিকে ভালভাবে জানতে ও বুঝতে চাই তবে আমরা দেখবো যে গবেষণায় পাওয়া গেছে একজন উদ্যোক্তার সাধারণ মানুষ থেকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পিছনে তার কিছু জিনগত বৈশিষ্ট্য দায়ী। নির্দিষ্ট জিনের বিভিন্ন রূপের মানুষদের নির্দিষ্ট ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলি বিকাশের বিভিন্ন সম্ভাবনা রয়েছে। এই জিনগতভাবে প্রভাবিত ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলির ফলস্বরূপ, একজন ব্যক্তির উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে। চলুন এই বৈশিষ্ট্য এবং প্রভাবগুলি সম্পর্কে কিছু ধারণা লাভ করা যাক।
মূলত, একটি নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য, আপনাকে অত্যন্ত খোলা মনের হতে হবে। খোলা মন বলতে উন্মুক্ততা, উদারতা, সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি, বুদ্ধিবৃত্তিক কৌতূহল এবং প্রতিনিয়ত নতুনত্বের সন্ধান করাকে বোঝায়। আর এই বিষয়গুলো কখনো কোন ব্যক্তি চর্চা করে নিজের মধ্যে তৈরী করতে পারে না। এ সকল গুণাবলি জন্মগত ভাবেই মানুষ তার জিনের মধ্যে পেয়ে থাকে যা তার উদ্যোক্তা হবার পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টাকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে। যেমন, যে সকল ব্যবসায়ীরা সংকীর্ণ মনের, সর্বদা নিয়ম ও কমফোর্ট জোনে থাকতে পছন্দ করে, নতুন আইডিয়া বাস্তবায়ন না করে পুরনো স্ট্রাটেজী নিয়েই পড়ে থাকে, কখনো কোন চ্যালেঞ্জ ও রিস্ক নিতে চায় না তাদের শুরু করা ব্যবসাগুলো দীর্ঘমেয়াদী কোন সফলতা বয়ে আনতে পারে না।
ব্যবসায় দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য উচ্চ মাত্রার দূরদর্শী ও ধৈর্য্যশীল হওয়া সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠাতাদের অবশ্যই এ ধরণের বৈশিষ্ট্য ও মন মানসিকতা থাকতে হবে। তাদেরকে তাদের ব্যবসার পিছনে সময় দিতে হবে। একটি ব্যবসা শুরু করে সাথে সাথে যদি সেখান থেকে Revenue প্রত্যাশা করা হয় তবে সেই ব্যবসা কখনোই দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে পারবে না। প্রথমদিকে সেই ব্যবসার পিছনে সময়, শ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। একটি শিশুকে বাবা-মা যেভাবে ধীরে ধীরে বড় করে তোলে ব্যবসাটিকেও সেভাবেই যত্ন সহকারে বেড়ে উঠতে দিতে হবে। ভবিষ্যত Revenue আয়ের প্ল্যান অবশ্যই থাকবে কিন্তু বর্তমানে Revenue এর পিছনে ছোটা যাবে না। আর এভাবে ব্যবসা পরিচালনা ও গড়ে তোলার জন্য ধৈর্য্য, অধ্যবসায় ও অসীম ইচ্ছাশক্তি এই ৩টি গুণ অবশ্যই প্রতিটি প্রতিষ্ঠাতার থাকতে হবে যা মূলত মানুষ তার জন্মগত ভাবেই লাভ করে থাকে। আর এই ৩টি গুণের কারণেই সফল ব্যবসায়ীরা চ্যালেঞ্জ এবং ব্যর্থতার মধ্যেও এগিয়ে যেতে থাকে।
সফল উদ্যোক্তারা অনেক বৈচিত্র্যময় মন মানসিকতার হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে সফল উদ্যোক্তারা সর্বদাই Out of the box চিন্তা ভাবনা করতে বেশী পছন্দ করে যার কারণে অন্য আর দশ জন মানুষের সাথে তাদের চিন্তা ভাবনা কখনো ম্যাচ করে না বা তারা কখনো অন্যান্যদের গতানুগতিক ও সাধারণ আইডিয়াগুলোতে সম্মত হয় না। তারা সর্বদা দূরদর্শী চিন্তা করে বিধায় তারা আজকে বসে দশ বছর পরের প্ল্যান ও Revenue নিয়ে ভাবে যা অন্য সাধারণদের বোধ শক্তির বাহিরে। এই কারণেই দেখা যায় যে অনেক সফল উদ্যোক্তারাই একটু একরোখা, জেদি ও বেপরোয়া হয়। তারা অন্যদের আইডিয়া ও দেখানো পথে চলতে চায় না বরং যেভাবেই হোক সকলের সামনে নিজের আইডিয়া বাস্তবায়ন করেই দেখায়। একটি ব্যবসা শুরু করার আগে তাদেরকে সমাজ, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদী অনেকের কাছ থেকেই অনেক সমালোচনা ও নানান রকম আদেশ উপদেশ শুনতে হয় কিন্তু তারা কখনো সেগুলোকে পাত্তা দেয় না। উদ্যোক্তাদের এই ধরণের মনোভাবের কারণেই আজ পৃথিবী বিল গেটস, স্টিভ জবস, এলন মাস্কদের মত সফল দৃষ্টান্তদের পেয়েছে কারণ তারা জন্ম থেকেই ভিন্ন কিছু ভাবার ও করার ক্ষমতা নিয়ে বেড়ে উঠেছিল।
কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই নিয়মিতভাবে আপনার বড় আইডিয়া গুলো বিনিয়োগকারীদের কাছে বোঝাতে এবং বিক্রি করতে সক্ষম হওয়ার জন্য আপনার Communication Skill ও মানুষকে Convince করার Skill খুবই উচ্চমানের হতে হবে। এর জন্য মূলত আপনাকে হতে হবে Extrovert। কিছু কিছু মানুষ আছে জন্ম থেকেই Introvert। তারা মানুষের সাথে ঠিক মত মিশতে ও কথা বলতে পারে না যার কারণে লাইফে তাদের পরিচিত মানুষ ও বন্ধু-বান্ধব কম থাকে। সবার সামনে Presentation দেয়া, সকলের সাথে Networking তৈরী করা, এই বিষয়গুলোতে তারা বরাবরই দূর্বল হয়ে থাকে। এ ধরণের মানুষ যদি উদ্যোক্তা হতে চায় তবে তার জন্য সফলতা অর্জন করাটা আর দশজন উদ্যোক্তার থেকে অনেক বেশী কঠিন হয়ে পড়ে। তাই যারা জন্ম থেকে Extrovert তারা অনায়াসেই মানুষের মধ্যে মিশতে মিশতে বড় হয় যার কারণে তাদের মধ্যে Communication Skill ও Convincing Skill গুলো আপনাতেই উন্নত হয়ে পড়ে। তাই তারা চাকরী করুক বা ব্যবসা, সব জায়গাতেই সকলের মন জয় করে নিজের একটি শক্ত অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়।
একজন সফল উদ্যোক্তা হতে আপনার পজিটিভ জিন প্রয়োজন। অর্থাৎ আপনার মধ্যে Positivity বিষয়টি থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। আপনি যদি পজিটিভ মন মানসিকতার হয়ে থাকেন তবে আপনি যে কোন বাধা বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ থেকে সুযোগ খুঁজে বের করে সেটিকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু আপনার মধ্যে যদি Negativity বেশী মাত্রায় থাকে তবে আপনি অল্প বাধাতেই হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিবেন। নেগেটিভ মন মানসিকতার মানুষেরা পৃথিবীর সব কিছতেই সমস্যা খুঁজে বের করে ও সর্বদাই হতাশা ও বিষন্নতার মধ্যে বাস করে। এ ধরণের মানুষদের দিয়ে কখনো ব্যবসা হয় না, কারণ ব্যবসা হচ্ছে চ্যালেঞ্জ ও রিস্কের খেলা। এখানে হার-জিত থাকবেই। কখনো আপনি হারবেন আবার কখনো জিতবেন। তাই এই খেলাটি দীর্ঘমেয়াদে চালিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আপনাকে অবশ্যই সর্বদা ইতিবাচক থাকতে হবে। আর এই ইতিবাচকতা ও নেতিবাচকতা দুটি বিষয়ই মানুষ তার জন্মগত ভাবে পেয়ে থাকে যার কারণে ইতিবাচক মানুষেরা কখনো নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা করে না আর নেতিবাচক মানুষেরা সহজে পজিটিভ কিছু ভাবতে পারে না।
এবং পরিশেষে, একটি ব্যবসা শুরু করার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হল আপনার আবেগ। আপনি যদি আপনার আইডিয়া এবং দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে নিজে উৎসাহী ও আত্মবিশ্বাসী না হন তবে আপনি কীভাবে এটি আপনার বিনিয়োগকারী বা ক্লায়েন্টদের কাছে তা বিক্রি করবেন? আবেগ শুধুমাত্র একটি বৈশিষ্ট্য নয় – এটি সৃজনশীলতা, নমনীয়তা এবং মানুষের মন জয় করার মতো একাধিক বৈশিষ্ট্যের যোগানদাতা। তাই যারা তাদের আবেগকে কনট্রল করে সঠিক পথে চালিত করতে পারে তারা তাদের অন্যান্য গুণাবলীর সর্বোচ্চ ব্যবহার সাধন করতে পারে। আপনি যদি খুব আবেগী হন যার কারণে আপনি ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারেন না, যে কোন চ্যালেঞ্জ ও রিস্ককে ভয় পান, অল্পতেই রেগে যান, সর্বদা নেতিবাচক চিন্তা করেন, ব্যবসা শুরু করেই Revenue কেন আসছে না তা নিয়ে হতাশাগ্রস্থ হন, মানুষের সমালোচনায় ভেঙ্গে পড়েন তবে ব্যবসা কখনোই আপনার জন্য নয়। আপনি যদি দৃঢ় ও শক্ত মন মানসিকতার হন তবে এই সকল বাধা বিপত্তিকে আপনি অনায়াসেই পার করে ফেলতে পারবেন।