The Alarming Position of The Muslims in This Modern Era
আমি মনে করি সারা বিশ্ব জুড়ে মুসলিম দেশ গুলোর মধ্যে বিবাদ ও অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের প্রধাণ কারণ হচ্ছে মূলত দূর্বল শিক্ষা ব্যবস্থা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা আবিষ্কারের অভাব এবং নতুন বা সৃজনশীল জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ তৈরী না হওয়া। আর মুসলমানদের এই দলাদলির কারণে গোটা বিশ্বে সব থেকে বেশি সুবিধা হাসিল করে নিচ্ছে যে সম্প্রদায়টি তা হচ্ছে ইহুদি।
এর পিছনে অনেক কারণ রয়েছে তবে তার আগে প্রথমেই দেখা যাক ইহুদিরা সারা বিশ্বে যুগ যুগ ধরে কিভাবে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে আছে। গোটা বিশ্বের সব থেকে প্রভাবশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা সহজ কথায় বলতে গেলে খ্রিস্টানদের সাথেই যদি তুলনায় যাই তবে আমরা দেখবো, ইহুদীরা মার্কিন জনসংখ্যার মাত্র ২%, আর পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.২%। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতি ৫০০ জনে একজন ইহুদী। কিন্তু জনসংখ্যার দিক দিয়ে ঢাকা শহরের কাছাকাছি হলেও বিশ্বে ইহুদি সম্প্রদায় থেকে যুগে যুগে বেরিয়ে এসেছে অসংখ্য প্রতিভাবান ব্যক্তি। প্রধান ধর্মগুলোর পর পৃথিবীতে যে মতবাদটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে সেই কমিউনিজমের স্বপ্নদ্রষ্টা কার্ল মার্কস ইহুদি সম্প্রদায় থেকে এসেছেন। বিশ্বের মানুষকে মুগ্ধ করে রাখা যাদু শিল্পী হুডিনি ও বর্তমানে ডেভিড কপারফিল্ড এসেছেন একই কমিউনিটি থেকে। এসেছেন আলবার্ট আইনস্টাইনের মত বিজ্ঞানী, যাকে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলা হয় আর প্রফেসর নোয়াম চমস্কি এর মত শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক যাকে প্রদত্ত ডক্টরেটের সংখ্যা আশিটির ও বেশি।
এর অন্যতম কারণ সাধারণ আমেরিকানরা যেখানে হাইস্কুল পাশকেই যথেষ্ট মনে করে সেখানে আমেরিকান ইহুদিদের ৮৫% বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। ইহুদিরা ঐতিহ্যগতভাবে তাদের প্রতিটি শিশু এবং যুবকের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করে। তাদের শিক্ষাগুলি পুথিগত বিদ্যা নয় বরং ব্যবহারিক, জীবনমুখী ও বাস্তববাদী। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সৃজনশীলতা, প্রযুক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবনের সাথে সম্পর্কিত। আমেরিকান নোবেল বিজয়ীদের মোটামুটি ৪০% ইহুদী অর্থাৎ নোবেল বিজয়ী প্রতি চার থেকে পাঁচ জনের একজন ইহুদী। আমেরিকার অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসররা ইহুদী। হতে পারে ইহুদিরা আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ, কিন্তু আমেরিকান রাজনীতিতে তাদের প্রভাব একচেটিয়া। আমেরিকার ১০০ জন সিনেটরের ১৩ জন ইহুদী। এর চেয়ে ভয়ংকর তথ্য হল ইহুদীদের সমর্থন ব্যতীত কোন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হতে পারেনা.
এবার আসা যাক মুসলমান সম্প্রদায় ও সারা বিশ্বের সকল মুসলিম দেশ গুলোর সাথে তুলনায়। বিশ্বের ১৪ মিলিয়ন ইহুদিদের উপরে বিশ্বের মোট ১.৪ বিলিয়ন মুসলমান রয়েছে। হিসাব অনুযায়ী দেখলে ১ জন ইহুদিদের বিরুদ্ধে ১০০ জন মুসলমান রয়েছে এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রতিটি পঞ্চম ব্যক্তি হচ্ছে একজন মুসলমান। তবে, মোট ৫৭টি মুসলিম দেশে প্রায় ৫০০ টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫৭৫৮টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এবং কোন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই বিশ্বের শীর্ষ তালিকায় নেই। মুসলিম দেশগুলোতে স্বাক্ষরতার হার কম এবং তাদের শিক্ষিত লোকদের মধ্যে মাত্র ২% বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক এবং, আধুনিক দেশগুলিতে প্রায় ১০০% শিক্ষার হার রয়েছে যার মধ্যে ৫০% এর বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। মুসলিম দেশগুলিতে মোট প্রায় ২৩০ জন বিজ্ঞানীর রয়েছে; অন্যদিকে একা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ৪০০০ জন বিজ্ঞানী ও জাপানের রয়েছে ৫০০০ জনেরও বেশি।
মুসলিম দেশগুলো তাদের মোট GNP (Gross National Product) থেকে গবেষণা ও উন্নয়নের (R & D) জন্য যে শতাংশ ব্যয় করেছে তা উল্লেখ করা লজ্জাজনক। এটি উল্লেখ করাও লজ্জাজনক যে মোট মুসলিম দেশগুলোতে উচ্চ প্রযুক্তির রপ্তানি থেকে মোট GNP তে অবদান কেবলমাত্র ০.২% যেখানে সিঙ্গাপুরের GNP এর ৫৮% উচ্চ প্রযুক্তির রপ্তানি থেকে আসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের নিজের বিরুদ্ধে বিভক্ত করতে এবং লড়াই করার জন্য গুটি হিসাবে ব্যবহার করতে পারার কারণটি হল, ১.৪ বিলিয়ন জনবহুল মুসলিম দেশগুলোতে মোট GNP কেবল ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩১০ মিলিয়ন জনসংখ্যার GNP রয়েছে ১২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর পরেও, বিশ্ব GNP তে GNP সমন্বিত ৫৭টি মুসলিম দেশের মধ্যে অনুপাত প্রতি বছর হ্রাস পাচ্ছে! সুতরাং মুসলমানরা যদি তাদের পদক্ষেপের প্রতি নজর না দেয় ও নিজেদের উন্নতির প্রতি সচেতন না হয় তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।বিশ্বজুড়ে ইহুদিদের আগ্রাসন ও মুসলমানদের ক্রমাগত পতন।