পরিবর্তিত সময়ের জন্য কর্মীরা কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন ?
প্রতি বছর অল্পবয়সী কিছু নবীন কর্মী কর্মজগতে প্রবেশ করেন। তারা অনেক বছর ধরে কাজ করেন এবং একই ধরনের কাজ করতে করতে একটি পুরনো প্রজন্মের মধ্যে প্রবেশ করেন। প্রতিযোগিতামূলক এই বাজারে কীভাবে টিকে থাকা যায়, একজন ব্যবস্থাপক সবসময় সেই পরিকল্পনা করে থাকেন। এজন্য প্রয়োজন হয় নিত্য নতুন উদ্ধাবনী প্রতিভা এবং কঠোর পরিশ্রম। অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এসব গুণাবলী সহজেই পাওয়া যায়। তারা পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে, কঠোর পরিশ্রম করতে পারে, নিজের প্রতিভাবে কাজে লাগিয়ে নিত্য নতুন কৌশল উদ্ভাবন করতে পারে। এই সময়ের সবচেয়ে নবীন কর্মক্ষম প্রজন্মকে বলা হচ্ছে ‘জেনারেশন জেড’। এরা সময়কে বুঝতে পারে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বদলে ফেলতে পারে। ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে পারে। বিভিন্ন দিক থেকেই এরা আগের প্রজন্মের চেয়ে অনেক বেশি চৌকশ। এদের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, নিয়োগকর্তা কী প্রত্যাশা করে তা এরা সহজেই বুঝতে পারে। এই ‘জেনারেশন জেড’রাই সারা পৃথিবীর কর্মজগতে নতুন ঢেউ সৃষ্টি করবে। শুধু তাই নয়, এরাই হবে কর্মক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় প্রজন্ম, যারা বুঝতে পারবে যে তারা কী করতে চায় এবং কী করা প্রয়োজন।
জেনারেশন জেড কারা এবং কী রকম
পিউ রিসার্চ বলছে, ১৯৯৬ সালের পরে যাদের জন্ম তারাই জেনারেশন জেডের সদস্য। এরাই সহস্রাব্দের পূর্বসূরী। এই মুহূর্তে এরা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ দখল করে আছে। এরা যে সময়ে বেড়ে উঠেছে সেই সময়টা আগের সময়ের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। এই প্রজন্ম তাদের আগের প্রজন্মকে মহামন্দার ভেতর দিয়ে যেতে দেখেছে এবং অতিসম্প্রতি কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে পা রাখতে দেখেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই বৈশ্বিক মহামারিটি লাখ লাখ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। বৈচিত্রের দিক থেকেও জেড জেনারেশন আগের প্রজন্ম থেকে অনেক বেশি বৈচিত্রপূর্ণ এবং শিক্ষার দিক থেকেও এগিয়ে। এদের সবচেয়ে গুরুত্বপর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এরা অতিমাত্রায় প্রযুক্তিবান্ধব। এদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইন্টারনেট প্রযুক্তির ভেতরেই বলা যায়।
জেড জেনারেশনের কত শতাংশ কর্মজগতে রয়েছে
২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মক্ষেত্রের ৩০ শতাংশ দখল করে ফেলবে জেড জেনারেশন। আগের প্রজন্মের সঙ্গে যদি তুলনা করেন তাহলে এই মুহূর্তে জেড জেনারেশনের কর্মীরা খুব সামান্যই কাজ করছে। পিউ রিসার্চ বলছে, ২০১৮ সালে জেড জেনারেশনের ১৮ শতাংশ কর্মক্ষেত্রে ছিল যাদের বয়স ছিল ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে।
জেড জেনারেশন কর্মক্ষেত্রে কী বার্তা দিচ্ছে?
অন্যান্য তরুণ প্রজন্মের মতোই জেড জেনারেশনের কর্মীরাও কর্মক্ষেত্রে নতুন নতুন ধারনা নিয়ে আসে। যেহেতু তারা প্রযুক্তির সন্তান, তাই তাদের ধারনার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির উপর ভর করেই তারা নতুন নতুন সৃজনশীল কৌশল উদ্ভাবন করেন। সুতরাং নতুন প্রযুক্তি কোম্পানির জন্য আপনি অবশ্যই তাদেরকে নিয়োগ দিতে পারেন। তারা প্রচলিত কর্মপদ্ধতি যেমন বেতন-ভাতা তৈরি, স্বাস্থ্যবীমার লভ্যাংশ প্রদান ইত্যাদি কাজেও বেশ পারদর্শী। এদের ৩৮ শতাংশ মনে করে কাজের ভারসাম্য রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে ৫৮ শতাংশ মনে করে অর্থের প্রয়োজনে রাতে এবং ছুটির দিনেও কাজ করা যেতে পারে। কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটির এক জরিপে দেখা যায়, জেড জেনারেশনের ৬৫ শতাংশ বলেছে, তাদের কাছে বেতন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর ৭০ শতাংশ বলেছে, একমাত্র বেতনের কারণেই তারা চাকরি করে। এছাড়া ৭০ শতাংশ বলেছে, স্বাস্থ্যবীমা না থাকলে সেখানে তারা চাকরি করবে না।
কর্মক্ষেত্রে জেড জেনারেশনের মতো আর কী আছে
কর্মক্ষেত্রে জেড জেনারেশনের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ‘মেধা’। তারা সহকর্মীদের সঙ্গে মুখোমুখি ভাববিনিময় করতে পছন্দ করে। খোলামেলা অফিস পছন্দ করে। রুদ্ধদ্বার বৈঠকের চেয়ে স্বাভাবিক আলাপ আলোচনা এবং মিটিং করতে পছন্দ করে। এরা অফিসের মধ্যে খুব বেশি কেতাদুরস্ত থাকতে পছন্দ করে না।
জেড জেনারেশনের একজন সদস্য মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির এক জরিপে অংশ নিয়ে বলেন, রুদ্ধদ্বার বৈঠকের চেয়ে উন্মুক্ত বৈঠক ও পরিকল্পনা আমার কাছে বেশি ভালো লাগে। স্বাভাবিক আলাপ আলোচনা ও গল্পের ঢংয়ে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত জানানো যায়। তিনি আরও বলেন, আমি যেখানে চাকরি করি সেখানে গল্প করা এবং গল্প গুজবের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাকে উৎসাহিত করা হয়। ফলে বাধাহীনভাবে আমি আমার মতামত তুলে ধরতে পারি, কাজ করতে পারি। এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, কোম্পানি আমাকে স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠার এবং নিজে উন্নতি করার সুযোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানি নিজেও উন্নতি করেছে। আমি বলতে চাইছি, কর্মীদের উন্নতিই আসলে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ডেকে আনে। জেড জেনারেশনের কর্মীরা একটু অতিরিক্ত সুযোগ পেলেই কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করতে চায়। তারা তাদের অভিজ্ঞতা বাড়াতে, কাজের দক্ষতা বাড়াতে, ক্যারিয়ারকে উন্নত করতে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যেতে দ্বিধা করে না।
জেড জেনারেশন, অন্যান্য জেনারেশন ও কর্ম জগতের বৈচিত্র
জেড জেনারেশন এমন এক সময়ের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে, যে সময়ে সমগ্র পৃথিবী বৈচিত্র, সমতা ও অন্তর্ভূক্তির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই মূল্যবোধগুলো যে খুবই দরকারি তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, জেড জেনারেশনের শতকরা ৮৩ জন সদস্য বলেছে তারা কোথাও চাকরিতে প্রবেশের আগে সেই কোম্পানির সমতা পলিসি, কর্মীদের প্রতি দায়বদ্ধতা, অন্তর্ভূক্তিমূলক ধারনা ইত্যাদিকে বেশি গুরুত্ব দেয়।
জেড জেনারেশন সম্পর্কে মানবসম্পদ ব্যবহারকারীদের কেন জানা উচিত?
জেড জেনারেশনের ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি। তারা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিখতে পছন্দ করে। তারপর লব্ধ জ্ঞানকে নিজের কাজে প্রয়োগ করে। তারা প্রতিনিয়ত শিখতে চায় এবং ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে আলাদা গুরুত্ব আরোপ করে।
সুতরাং এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জেড জেনারেশন নানা কারণে অন্য জেনারেশন থেকে একেবারেই ভিন্ন। এই প্রজন্ম আপনার কোম্পানি পরিচালনা থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্ব দানে ভূমিকা রাখবে। এতে আপনার প্রতিষ্ঠান হবে লাভবান। আপনি যদি জেড জেনারেশনের ভেতর থেকে সবচেয়ে মেধাবীদের বেছে নিতে পারেন তবে আপনার চেয়ে লাভবান আর কেউ হতে পারবে না।