Duties & Responsibilities of Children Towards Parents

Duties & Responsibilities of Children Towards Parents

এ পৃথিবীতে একটি মানুষের সব থেকে বড় আপনজন হচ্ছে তার বাবা-মা। সন্তান জন্ম দেয়া ও তাকে লালন-পালন করাকে যদি আমরা একটি পেশা হিসেবে ধরি তবে বাবা-মা হচ্ছে এই পৃথিবীর একমাত্র এমপ্লয়ি যারা বিনা পারিশ্রমিকে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা তার সন্তানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন হোটেলে কর্মচারীরা মাথা নিচু করে সালাম দিলেই, হালকা কিছু সার্ভিস প্রদান করলেই আমরা খুশি হয়ে তাদের ধন্যবাদ দেই, টিপস দেই অর্থাৎ বাড়তি কিছু টাকা বকশিশ দেই। এই সামান্য বিষয়টি যদি খেয়াল করি তাহলে বুঝতে পারবো যে, এই পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের মা যে আমাদের কত আদর যত্ন করে লালন পালন করে বড় করছে, কত সার্ভিস দিচ্ছে সেই হিসাব কি আমরা রেখেছি? মায়ের এই সার্ভিস, আদর, যত্ন, ভালবাসার বিনিময়ে আমরা কখনো একটু ধন্যবাদ বা সরিও বলি না। আমাদের মায়েরা তাদের  আদর, যত্ন, ভালবাসার বিনিময়ে আমাদের কাছ থেকে কখনো কোনো টিপস বা বকশিশও চায় না। বাবা মা-রা তাদের সন্তানদের সফলতা, ভাল ভবিষ্যৎ, সম্মান চায়। মা যেমন সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে পেটে ধারণ করেন, জন্ম দেন এবং লালন-পালনের অতুলনীয় দায়িত্ব পালন করেন, তেমনি বাবাও অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের বেঁচে থাকার সব উপকরণের ব্যবস্থা করেন।

পিতা মাতার মৃত্যুর পর আপনি কোটি কোটি টাকা উপার্জন করলেও আপনার কাছে শান্তি লাগবে নাহ। তখন শুধু এইটাই মাথায় আসবে, আজ যদি মা বেঁচে থাকতো তবে গাড়ি করে মাকে নিয়ে পুরো শহর ঘুরে আসতাম, বাবাকে বিদেশে ঘুরতে নিয়ে যেতাম, ভাল ভাল কিছু খাবার খাওয়াতাম। কিন্তু তখন শুধুমাত্র টাকাই থাকে মা বাবাকে আর পাওয়া যায় নাহ। 

আপনার বাবা মা যদি এখনো বেঁচে থাকে তাহলে তাদেরকে তাদের প্রাপ্য সম্মান এবং সময়টুকু দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে একবার বাবা মায়ের মুখটা দেখুন নিজের কাছেই ভাল লাগবে। তাছাড়া রাতে ঘুমন্ত বাবা মায়ের মুখ দেখাও সোওয়াবের কাজ। এটাও একটা ইবাদাত। মা বাবা বেঁচে থাকতে তাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান করা উচিত এবং তাদের প্রকৃত মূল্য বুঝা উচিত। আজকালকার সন্তানরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে না, নানান অপসংস্কৃত ও আজে বাজে কাজে নিজেদের সময় নষ্ট করে। পাশাপাশি তারা তাদের বাবা মাকেও নিজের শত্রু মনে করে কারণ বাবা-মা সর্বদা তাদেরকে এই সব খারাপ কাজে বাধা ও ভাল পথে চলার জন্য বলতে থাকে। এটা একদম ঠিক কাজ না। কিশোর অবস্থাতেই নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিৎ। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা উচিৎ। যখন আপনার বাবা মা আপনার মধ্যে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিবর্তন লক্ষ্য করবে তখন তারা আপনার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইবে। বাবা মা একবার মন থেকে দোয়া করলে পৃথিবীর কারো সাধ্য নেই সেই সন্তানের সফলতার পথে বাধা সৃষ্টি করার। সেই সন্তান সফলতা পাবেই। সন্তানেরও উচিৎ বাবা মায়ের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা। বাবা মা যেন সন্তানের সফলতা দেখে যেতে পারে। সন্তান যেন সময় থাকতেই বাবা মায়ের সেবা করতে পারে। 

এমন অনেক বাবা মা আছে যারা হয়তো তাদের সন্তানকে কখনো কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে পারে নি, ভাল কিছু উপহার দিতে পারে নি, এই না পারার জন্যও কিন্তু সেই বাবা মায়ের মধ্যে একটা ব্যাথা কাজ করে। যখন একজন বাবা দেখে যে তার সন্তানের বন্ধুরা ঘুরতে যাচ্ছে কিন্তু তার সন্তানটা টাকার অভাবে ঘুরতে যেতে পারছে না তখন কিন্তু বাবাও মনে মনে খুব কস্ট পায়, বাবারাও কিন্তু কাঁদে, সেটা কখনো সন্তানকে বুঝতে দেয় না। একজন বাবা তার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে সন্তানকে সুখে রাখার। কিন্তু সন্তানরা হয়তো এই বিষয়টি মাঝে মাঝে বুঝতে পারে না। অনেক ছেলেমেয়েই আছে যারা মনে করে তাদের বাবা মা তাদেরকে কথায় কথায় খোটা দেয়। অন্য বাচ্চাদের তুলনা দেয়। বাবা মা হয়তো কোন একটি কারণে সন্তানকে বকা দিয়েছে তার মানে এই নয় যে সে তার সন্তানকে ছোট করার জন্য বলেছে, বাবা তার সন্তানকে বড় করার জন্যই কিন্তু শাসন করেছে। সন্তানকে বুঝতে হবে বাবা কিন্তু তার ভালোর জন্যই তাকে শাসন করেছে বা বকা দিয়েছে। প্রতিটি বাবা-মা ই তাদের জীবনের পুরো সময় টা তাদের সন্তানদের পেছনে, সন্তানদের মানুষ করতে ব্যায় করেন। তারা হয়তো এই সময় টা অন্য কোন ভাবে, নিজেদের কাজে কাটাতে পারতেন। তারাও তো মানুষ, তাদেরও তো কত ধরনের ইচ্ছা হতেই পারে, একটু আধটু বিলাসিতা করার ইচ্ছা জাগতেই পারে, তাদের ও অনেক রকম ভালো লাগা, শখ থাকতে পারে। কিন্তু তারা সেই সব কিছু একদিকে ঠেলে দিয়ে সন্তানের প্রয়োজনটাকেই আগে দেখেন। 

এজন্যই পবিত্র কোরআনের অন্তত ১৫ জায়গায় মা-বাবার প্রতি সন্তানের কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে এবং আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করার পাশাপাশি মা-বাবার সঙ্গে ভালো আচরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কোরানের সূরা বনি ইসরাইলের ২৩ ও ২৪ নং আয়াতে বলেছেন, ‘‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবনকালে বৃদ্ধ হয়ে যায়, তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং ধমক দিও না। বরং তাদের সঙ্গে নরম সুরে কথা বলো। দয়াপরবশ হয়ে নম্রভাবে তাদের সামনে মাথানত করে দাও এবং বলো, হে পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন, যেমন তারা শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন।” এ ছাড়াও আল্লাহ সুরা লোকমানের ১৪ নং আয়াতে বলেছেন, “আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। কেননা তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। আমি আরও নির্দেশ দিয়েছি, আমার প্রতি ও তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে তোমাদের আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে।” পাশাপাশি মহানবী (সা.) মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে নাসায়ি হাদিসে বলেছেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পরেই মায়ের স্থান এবং মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।”। সেই সাথে বাবার মর্যাদা সম্পর্কে তিনি তিরমিজি হাদিসে উল্লেখ করেছেন, “বাবার সন্তুষ্টির ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং বাবার অসন্তুষ্টির ওপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি নির্ভর করে।”

আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত হচ্ছে বাবা মা। আল্লাহ চাইলে আমাদের বাবা মা না দিলেও পারতো। যেমন বিবি হাওয়া এবং আদম (আঃ) কে কিন্তু সরাসরি পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। তাই আমরা তাদেরকে আদি পিতা এবং আদি মাতা হিসেবে জানি এবং বিবি হাওয়া এবং আদম (আঃ) এর থেকেই আমরা সবাই এসেছি। আল্লাহ বাবা মাকে সন্তানের জন্য ছায়া হিসেবে পাঠিয়েছেন। সব সমস্যা, দুঃখ, কষ্ট থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ আমাদের বাবা মা দিয়েছে্ন। বাবা মা না থাকলে একটি সন্তান এতিম হয়ে যায়। তার মাথার উপর কোন ছায়া থাকে না, যার কারণে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে তাকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত একটি সন্তান কিন্তু পুরোপুরি বাবা মায়ের উপরই নির্ভরশীল এবং বাবা মাকেই সবচেয়ে বেশি কাছের হিসেবে ধরে নেয়। ১৮ বছর বয়সটার পর কিন্তু সেই সন্তান যখন একটু একটু করে নিজেকে বুঝতে শিখে তখন সে আর তার বাবা মার আদর্শ অনুসরণ করতে চায় না। সে তার নিজের মধ্যে নিজের মত করে একটি আদর্শ তৈরি করে নেয়। আর এই জায়গায়ই কিছু কিছু ছেলেমেয়ে বিপথে চলে যায় আবার  কিছু কিছু ছেলেমেয়ে নিজের ভবিষ্যৎ লক্ষ নির্ধারণ করে।

পৃথিবীর সব কিছুতেই বিনিময় প্রথাটা আছে একমাত্র বাবা-মা ব্যতীত। জীবন তো একটাই কিন্তু সেই এক জীবনের সবটুকু সময়ই বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ভালো রাখার জন্য ব্যায় করেন। প্রতিটি মানুষের জীবনেই বাবা-মায়ের অনেক বড় অবদান রয়েছে। কোনো কিছুর সাথে পিতার ধৈর্য এবং মায়ের ভালোবাসার তুলনা করা যায় না। তাই যতক্ষণ তারা বেঁচে আছেন তাদের কদর করতে হবে ও তাদের সেবা করতে হবে। যে ব্যক্তি তার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সেবা করার সুযোগ পেয়েও তা অবহেলা করে তার মত দূর্ভাগা এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই কারণ মা-বাবার দোয়া সরাসরি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। তাই যে ব্যক্তি তার ভক্তি, শ্রদ্ধা, সম্মান ও কর্মের দ্বারা বাবা-মায়ের সন্তুষ্টি ও দোয়া অর্জন করতে সক্ষম হয় তার ইহকাল ও পরকাল উভয় জীবনেই আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *