Importance of Art of Living for Teachers
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড আর এই মেরুদন্ড গড়ার কারিগর হচ্ছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষকদের দক্ষ পরিচালনা ও পথনির্দেশনায় একটি জাতি গড়ে ওঠে ও এগিয়ে যায় সম্মৃদ্ধির পথে। একটি জাতির শিক্ষকেরা যত বেশী শিক্ষিত ও দক্ষ, সেই জাতির তরুণ সমাজেরা তত বেশী সুযোগ পায় নিজেদেরকে গড়ে তোলার কারণ যিদি পথনির্দেশনা দিবেন তার নিজেরই যদি পথের দিশা না থাকে তবে তিনি কিভাবে পারবেন তরুণদেরকে তাদের কাংক্ষিত লক্ষ্যে পৌছে দিতে?
Role of a Teacher
সমাজে সকলের সাথে সঠিক ভাবে মিলেমিশে জীবন যাপনের জন্য আর্ট অফ লিভিং এর শিক্ষা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমনই একটি বিষয় যা মানুষকে তার কথা-বার্তা, চলা-ফেরা, আদব-কায়দা, আচার-আচরণ, নীতি-নৈতিকতা ইত্যাদী বিষয় সমূহের ব্যাপারে নিজেকে উন্নতরূপে গড়ে তুলে তার এই গুণাবলী দ্বারা সমাজ ও পরিবারের উন্নতি সাধন করতে শেখায়। আর সকল শিক্ষার্থীদেরকে এই আর্ট অফ লিভিং শেখানোর দ্বায়িত্ব যিনি পালন করেন তিনিই হলেই শিক্ষক। আর্ট অফ লিভিং এমনই একটি বিষয় যা শুধু মাত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই বিষয়টির পরিসীমা অনেক সম্প্রসারিত যার কারণে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও তাদের ব্যক্তিগত ও Professional Life এ এই বিষয়টির জ্ঞান গুলো কাজে লাগানো উচিত। একজন শিক্ষক হলেন জাতি তথা গোটা তরুণ সমাজের জন্য Role Model। একটি শিশু তার বাবা-মায়ের পরেই আচার-আচরণ ও নীতি-নৈতিকতায় অনুসরণ করে তার শিক্ষককে। স্কুল থেকে শুরু করে ভার্সিটি পর্যন্ত একজন শিক্ষকই পারে একটি ছেলে বা মেয়ের সারা জীবনের দিক নির্দেশক হয়ে তাকে একটি সঠিক Career এর জন্য তৈরী করতে পাশাপাশি সেই ছেলে বা মেয়েটির নৈতিক শিক্ষা, সামাজিকতা, নিয়ম-শৃংখলা সব কিছুর দ্বায়িত্বও পালন করতে হয় সেই শিক্ষককে। এ কারণে সর্ব প্রথমে সেই শিক্ষককে সর্বদা মাথায় রাখতে হবে যে কিভাবে সে নিজেকে তার শিক্ষার্থীদের সামনে একটি আদর্শ হিসেবে উপস্থাপিত করবে যেন তাকে দেখে সকলে অনুপ্রাণিত হয়।
Behavior & Dress-up of a Teacher
একজন শিক্ষক সমাজের সর্বোচ্চ সম্মানিত আসনে অবস্থান করেন কারণ তিনি সমাজ তৈরীর কারিগর। তার চাল-চলন, পোশাক, কথা-বার্তা, আদব-কায়দা কখনই আর সাধারণ মানুষের মত হওয়া উচিত না। একজন মানুষের মধ্যে যা কিছু ভাল তার সব কিছুকেই মনে-প্রাণে ধারণ করতে হবে একজন শিক্ষককে। তাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে সকলের দৃষ্টি সব সময় তার উপর আছে তাই সে চাইলেই যখন যা খুশি করতে পারবে না। তাকে সর্বদা Logic ও Morality দ্বারা তার সকল কাজকে সকলের সামনে উপস্থাপিত করতে হবে যেন কেউ কখনও তার প্রতি আঙ্গুল তোলার অবকাশ না পায়। একজন শিক্ষকের পোশাক হবে সকলের থেকে অত্যান্ত গোছানো ও মার্জিত। তিনি যে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন সেই প্রতিষ্ঠানের Official পোশাক অথবা তার নিজের মত করে মার্জিত পোশাক পরে তাকে প্রতিষ্ঠানে আসতে হবে যেন তাকে আলাদা ভাবে শিক্ষক হিসেবে চেনা যায়। তার শার্ট, প্যান্ট এবং জুতা হতে হবে অত্যান্ত শালীন ও শোভনীয়। তাকে অবশ্যই তার প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড পরিধান করতে হবে। এখন একজন শিক্ষককে এক নজরে দেখে যদি কেউ বুঝতে না পারে যে উনি কি একজন বাহিরের ছাত্র, অভিভাবক নাকি অফিসের স্টাফ তাহলে তার শিক্ষকতার যোগ্যতা নিয়ে আসলেই প্রশ্ন তুলতে হয়। যে সকল শিক্ষকেরা নিজেরাই নিজেদের Dress Code ঠিক রাখে না, এ ধরণের শিক্ষক থেকে কিভাবে তাদের শিক্ষার্থীরা আশা করতে পারে শালীনতার শিক্ষার? পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী প্রথম দর্শনে একজন শিক্ষককে দেখে যদি তাকে শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করতে না পারে তবে তার প্রতি সেই শিক্ষার্থীর কখনই মন থেকে সম্মান আসবে না।
Relationship Between Teacher & Student
প্রতিটি শিক্ষার্থীর ছাত্রজীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হচ্ছে তার সাথে তার শিক্ষকের সম্পর্ক। এটি অত্যান্ত জরুরী একটি বিষয় কারণ এই সম্পর্কের উপর নির্ভর করে ঐ শিক্ষার্থী তার শিক্ষকের কাছ থেকে কি শিখতে পারছে সেটি। আর এই সম্পর্কটি গড়ে ওঠে ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে। একজন শিক্ষককে সর্বদাই বুঝতে হবে তার ছাত্র-ছাত্রীরা তার কাছ থেকে কি ধরণের ব্যবহার ও সহযোগিতা আশা করে। একজন শিক্ষকের অনেক বড় বড় ডিগ্রি, সার্টিফিকেট থাকতেই পারে, তিনি অনেক বড় যায়গা থেকে শিক্ষকতা করে আসতেই পারেন, সমাজে তার আরো অনেক বড় বড় সম্মানিত পদবী থাকতেই পারে কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর নিকট তার একমাত্র পরিচয় হচ্ছে তিনি শিক্ষক আর অন্য কিছুই নয়। তিনি যখন শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করবেন তখন তার সকল ডিগ্রি, সার্টিফিকেট, অভিজ্ঞতা, পদবী ও সর্বোপরি অহংকারকে শ্রেণীকক্ষের বাহিরে রেখে আসতে হবে কারণ এগুলো সাথে নিয়ে কখনই একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর কাছাকাছি যেতে পারবেন না। শিক্ষককে হতে হবে তার ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট বন্ধুর মত। একজন শিক্ষার্থীকে শুধু মাত্র Academic পড়াশোনা শেখানোই একজন শিক্ষকের দ্বায়িত্ব নয় বরং সেই শিক্ষার্থীর সকল প্রকার মানসিক বিকাশ ঘটানো, সামাজিক সমস্যার সমাধান করা এবং সেই শিক্ষার্থীর অভ্যন্তরীণ সুপ্ত প্রতিভাকে চিহ্নিত করে সেটিকে বাহিরে বের করে এনে তাকে তার সঠিক ক্যারিয়ার জীবন গঠণের দিক নির্দেশনা দেয়া এ সব কিছুই তার দ্বায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ সব কিছু একমাত্র তখনই সম্ভব যখন একজন শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছাকাছি এসে তাদের মনের মাঝে বিশ্বাসের আসনটি অর্জন করতে পারবেন। আর এই অর্জনটি তার সকল ডিগ্রি, সার্টিফিকেট, অভিজ্ঞতা ও পদবীর থেকেও অনেক সম্মানের, অনেক গৌরবের।
Teaching Methodology, Beyond Book & Syllabus
অনেক শিক্ষক আছেন যারা তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি যত্নশীল না। ক্লাসে তারা কি পড়ছে, কি শিখছে, যা শিখছে তার প্রতিফলন তাদের বাস্তব জীবনে কাজে লাগছে কিনা এগুলো নিয়ে তাদের কোনই মাথা ব্যথা নেই। তারা শুধু মাত্র ক্লাসে আসেন ও Syllabus অনুযায়ী পড়িয়ে আবার বাসায় চলে যান। এ ধরণের শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের শেখার কিছুই নেই। শিক্ষকদের অবশ্যই শুধু মাত্র Syllabus এর মধ্যে সীমাবন্ধ না থেকে শিক্ষার্থীদের জীবনমুখী শিক্ষা ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানান রকম শিক্ষনীয় সভা, সেমিনার, অনুষ্ঠান, Workshop ইত্যাদীর আয়োজন হয় যার দ্বারা Academic শিক্ষার বাহিরে শিক্ষার্থীরা তাদের Career ও জীবন গঠণে সহায়ক শিক্ষা পেয়ে থাকে। একজন শিক্ষকের উচিত তার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এ সকল অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করা এবং এগুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে তাদেরকে বোঝানো। শিক্ষার্থীদেরকে নানান রকম Extra-curricular কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্যও শিক্ষকদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা উচিত কারণ এ ধরণের কার্যক্রম দ্বারা শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীন সুপ্ত প্রতিভাগুলো বের হয়ে আসে এবং এটি একজন শিক্ষকের দ্বায়িত্ব তার শিক্ষার্থীদের মেধাকে বের করে এনে সেগুলো সঠিক কাজে লাগানোর জন্য তাকে অনুপ্রাণীত করা।
Be a Role Model Forever
একজন শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট শুধু মাত্র আজকের শিক্ষক নয় বরং সারা জীবনের শিক্ষক। শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যায় কিন্তু ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক কখনও শেষ হয় না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একজন ছাত্র তার শিক্ষককে অনুসরণ করে সেই শিক্ষকের জীবনাদর্শে নিজের জীবনকে এগিয়ে নিতে চায়। তাই সেই শিক্ষকের ব্যক্তিগত জীবনও হতে হবে নীতি ও আদর্শে ঘেরা এবং সব ধরণের পাপ ও অন্যায় মুক্ত। আর এ জন্যই শিক্ষকতা এ পৃথিবীর সব থেকে কঠিণ ও সম্মানিত পেশা এবং এই পেশা সব ধরণের মানুষের জন্য নয়। আর এই কারণেই শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও উচিত Art of Living সম্পর্কে জানা। শিক্ষকেরা যদি নিজেরা Art of Living এর শিক্ষাগুলি নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে না পারে তবে তারা কখনই সেই শিক্ষাগুলি তাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারবে না এবং শিক্ষার্থীরাও সেগুলো নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারবে না। একজন শিক্ষকের লক্ষ্য শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদেরকে সকলের থেকে সেরা ও যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই নয় বরং নিজেকেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে সেরা ও আদর্শরূপে গড়ে তোলা যেন সে তার জ্ঞানের আলো ও আদর্শের শিক্ষা দ্বারা সকলের সামনে নিজেকে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরতে পারে। তাই সর্বোপরি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ লক্ষ্যটি পূরণে নিঃসন্দেহে আর্ট অফ লিভিং এর কোন বিকল্প নেই।