![](https://notes.sabur.me/wp-content/uploads/2022/11/pexels-guduru-ajay-bhargav-939702-1038x576.jpg)
How Children Should Grow-up for The Future
আজকের এই বর্তমান বিশ্ব হচ্ছে প্রতিযোগীতার বিশ্ব। প্রতিনিয়ত মানুষকে নানান প্রকার প্রতিবন্ধকতা পার করে এখানে বেঁচে থাকতে হয়। মানুষের জীবনটাই আজ একটি যুদ্ধক্ষেত্র। আমরা যদি এক নজরে একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার বেঁচে থাকার যুদ্ধ গুলো দেখতে চাই, তবে আমরা দেখবো…
আজকের বিশ্বে একটি শিশুর জন্মের পর শিশুটি বেড়ে ওঠার একটি পর্যায়ে তার বাবা মায়ের চিন্তা থাকে শিশুটিকে একটি ভাল মানের স্কুলে ভর্তি করানো। একটি সময় ছিল যখন বাচ্চাকে সাথে করে স্কুলে নিয়ে গেলেই ভর্তি করিয়ে আনা যেত কিন্তু বর্তমানের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটি ছোট বাচ্চাকেও প্রথম একটি ভাল মানের স্কুলে ভর্তি হবার জন্য নানান রকম Exam, Interview, IQ Test ইত্যাদী বিষয়গুলি পার করতে হয়। অর্থাৎ শিক্ষাজীবনে তাকে প্রবেশ করতেই হয় প্রতিযোগীতার মাধ্যমে। অতঃপর সারা বছর জুড়ে নানান রকম Exam, Test ইত্যাদী পার করে সবার থেকে বেশী Marks পেয়ে ক্লাসের সেরা Student হওয়া নিয়েও চলে প্রতিযোগীতা। খেলার মাঠে সবার চেয়ে বেশী গোল করা কিংবা সব থেকে বেশী রান করা নিয়েও চলে প্রতিযোগীতা। নানান প্রকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয়ে নিজের সেরাটা প্রদান করে পুরষ্কার পাওয়া নিয়ে চলে প্রতিযোগীতা। অতঃপর স্কুল-কলেজের পাঠ চুকিয়ে দেশের নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা Medical বা BUET এ ভর্তির সময় দেখা যায় আরেক প্রতিযোগীতা। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ হবার পর সেই ছোট্ট শিশুটি যে কিনা আজ একজন পূর্ণ বয়স্ক যুবক, তাকে মুখোমুখি হতে হয় তার জীবনের সব থেকে কঠিন প্রতিযোগীতার সাথে আর সেটি হলো একটি কাংক্ষিত চাকরী পাওয়া। অর্থাৎ মানুষ কখনই প্রতিযোগীতার উর্ধে নয়। জীবনে একটি সফলতম স্থানে পৌছাতে হলে এ সকল প্রতিযোগীতা পার হয়ে আসতেই হবে তাকে। এর কোন বিকল্প নেই।
বেকারত্ব আজকের বিশ্বের একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা বিশেষ করে আমাদের দেশে। আমাদের দেশের অধিকাংশ তরুণেরা পড়াশোনা শেষ করে বেকার বসে আছে। তারা যে বিষয়ে পড়াশোনা করেছে সেই বিষয়ে একটি কাংক্ষিত চাকরী জোগাড় করতে ব্যর্থ হচ্ছে যার ফলে নিজেদের Track বদলে বেছে নিচ্ছে অন্য কোন পেশা। কেউ সফল হচ্ছে, কেউ ব্যর্থ হয়ে নিমজ্জিত হচ্ছে হতাশায়। কিন্তু কেন এই বেকারত্ব ? আমরা যদি এই সমস্যার গোড়া নিয়ে আলোচনা করতে চাই তবে আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই শিশুটির জন্মের সময়। আমাদের দেশে একটি Culture আছে, ঘরে কোন বাচ্চা জন্ম নিলে তাকে নিয়ে আদর যত্নের শেষ থাকে না। তার নানান প্রকার অমূলক আবদার ও বায়নাগুলো সাথে সাথে পূরণ করা হয়। তাকে ননীর পুতুল বা আলালের ঘরের দুলাল বানিয়ে রাখা হয়। বাবা-মা সর্বদা ভয়ে থাকে বাচ্চাকে কোথাও একা একা বা বন্ধুদের সাথে দূরে কোথাও পাঠাতে। তারা সর্বদা বাচ্চাকে ঘরের মধ্যে নিজেদের চোখের সামনে আগলে রাখতে চায়। যার কারণে বাচ্চাটি কখনো কারো সাথে ভাল ভাবে মিশতে পারে না। দূরে ঘুরতে যেতে না পারার কারণে তার আশে পাশে এলাকায় বাহিরে কি আছে সে সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারে না। মানুষের সাথে তার কোন প্রকার Bonding গড়ে ওঠে না। সে এক প্রকার ঘরকুনো স্বভাবের হয়ে বড় হতে থাকে। বাচ্চাটি কোন সমস্যায় পড়লে বাবা-মায়েরাই সেটা সমাধান করে দেয় যেন বাচ্চাটির কোন ভোগান্তি না হয়। যার ফলে বাচ্চাটি নিজের সমস্যা নিজে নিজে সমাধান করা শেখে না। বাবা-মায়ের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অনেক বাবা-মা আছে বাচ্চাকে পড়াশোনার বাহিরে কোন কিছু করতে দিতে চায় না। তাদের কথা অনুযায়ী এতে করে বাচ্চার পড়াশোনার ক্ষতি হবে। এ ধরণের বাচ্চাদের Extracurricular Talent গড়ে ওঠে না কিংবা তেমন কিছু থাকলেও সেটা কখনো বিকশিত হয় না। এরা মিশুক প্রকৃতির হয় না। মানুষের সাথে কিভাবে মিশতে হবে, কিভাবে কথা বলতে হবে, কিভাবে চলতে হবে সে সম্পর্কে তারা সঠিক Guideline পায় না। আর এ সব কিছুর প্রভাব পড়ে তার স্কুল ও কলেজ জীবনে। বাবা-মায়ের আদরে বড় হবার কারণে এদের মধ্যে অলসতা কাজ করে। এরা পরিশ্রমী হয়ে বড় হয় না। অনেক সময় পড়াশোনাতেও তারা ভাল করতে পারে না। আর যারা ভাল করে, দেখা যায় যে তারা তাদের মধ্যে ছোট বেলা থেকে কোন Soft Skill বা Hard Skill তৈরী করতে পারেনি। শুধু ভাল রেজাল্টের জোরে চাকরী পাবার দিন এখন আর নেই যার ফলে এদের ভাল Certificate থাকার পরেও এরা কোন ভাল কোম্পানীতে চাকরী অর্জন করতে পারে না।
মোটকথা, আমাদের সমস্যার যেখানে শুরু; সেখান থেকেই এটি প্রতিকার করতে হবে। একটি শিশুর জন্মের পর তাকে আদরে বড় না করে Challenging অবস্থার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাচ্চাটিকে বোঝাতে হবে যে এই পৃথিবী কোন আদরের জায়গা নয়। এখানে যে কোন কিছু পেতে গেলে সেটাকে প্রতিযোগীতার মাধ্যমে নিজের যোগ্যতায় অর্জন করে নিতে হবে। হোক সেটা বাবা-মায়ের কাছে আবদার-বায়না কিংবা খেলার মাঠের হাততালি কিংবা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল রেজাল্ট কিংবা একটি কাংক্ষিত চাকরী। জীবনের প্রতিটি পর্যায়কে প্রতিযোগীতা হিসেবে ভেবে তবেই আগাতে হবে। নিজেকে সর্বক্ষেত্রে সকলের সেরা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর এর জন্য বাবা-মায়েদেরকে সব থেকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। বাবা-মায়েদের উচিত ছোট বেলা থেকেই তাদের বাচ্চাদের পরিশ্রমী, কর্মঠ, উদ্যোগী ও সব থেকে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় উচ্চাকাংক্ষী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। উচ্চাকাংক্ষা যে কোন মানুষকে তার সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে যথেষ্ট। উচ্চাকাংক্ষী মানুষ কখনো পরাজীত হয়ে বসে থাকে না। সে কোন না কোন ভাবে তার লক্ষ্যে পৌছানোর পথ খুঁজে বের করেই। তাই একটি বাচ্চা ছোট বেলা থেকেই যদি নিজেকে উচ্চাকাংক্ষী হিসেবে গড়ে তুলে তার চলার পথের সব লক্ষ্য পূরণ করতে থাকে তবে জীবনের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌছাতে তাকে ভবিষ্যতে কেউ থামাতে পারবে না।
আমরা প্রায়ই খবরে বা পত্রিকায় দেখি যে কৃষকের সন্তান বা দিন-মজুরের সন্তান সর্বোচ্চ রেজাল্ট করেছে কিংবা অনেক ভাল কোন একটা অবস্থান অর্জন করেছে। আমরা যদি এটিকে একটি Referance হিসেবে দেখতে চাই তবে আমরা দেখবো, যে বাচ্চাটি জন্ম নিয়েছে কৃষক বা দিন-মজুরের ঘরে; তার বেড়ে ওঠাটা কোন আদর-যত্নের মধ্যে দিয়ে হয়নি। হয়েছে দারিদ্রতা ও ক্ষুধার মধ্যে দিয়ে। সেই বাচ্চাটি ছোট বেলা থেকেই বুঝতে পেরেছে যে এই কঠিন দুনিয়াতে টিকে থাকতে হলে, নিজের একটি অবস্থান গড়তে হলে কঠোর পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। অতঃপর তারা সেভাবেই নিজেদেরকে প্রস্তুত করে জীবন যুদ্ধ পাড়ি দিয়ে সফলতার মুখ দেখতে সক্ষম হয়েছে। তবে সব কৃষক, দিন-মজুর বা গরীবের সন্তান কিন্তু জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। পারে শুধু তারাই যাদের মধ্যে উচ্চাকাংক্ষা কাজ করে। যারা নিজের বাবার পেশাতে কখনই নিজেকে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে না। আমরা যদি ইতিহাস দেখি তবে দেখবো বিশ্বের অধিকাংশ বিজ্ঞানী, শিল্পপতি, সাহিত্যিক ও অন্যান্য বিখ্যাত মনীষীরা কেউই সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেনি। সকলেই কঠোর দারিদ্রতাকে জয় করে আজকে বিশ্বে তার কর্ম দ্বারা অমর হয়ে আছে। আমরা যদি ইসরাইলের বাচ্চাদের দেখি তবে তাদের মাঝে এই অভ্যাসগুলো দেখতে পাবো। তাদেরকে তাদের বাবা-মায়েরা ছোট বেলা থেকে এমন ভাবে বড় করে তোলে যেন তারা বড় হয়ে Leader হিসেবে বিশ্বের সকল Sectorএ নেতৃত্ব দিতে পারে যার ফলশ্রুতীতে আজকে আমরা দেখি বিশ্বের সকল শক্তিশালী জায়গাগুলো রয়েছে ইহুদীদের নেতৃত্বে। এ ছাড়া জাপানের বাচ্চারাও ছোট বেলা থেকে অনেক পরিশ্রমী ও তাদের আচার-আচরনও অত্যান্ত Matured। আর আমরা সবাই জানি Japanese দের কর্মদক্ষতা সম্পর্কে যার কারণে ২য় বিশ্ব যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থের পরেও জাপান আজ এত উন্নত, কারণ ছোটবেলা থেকে গড়ে তোলা এই বাচ্চা গুলো যখন বড় হয়ে দেশের হাল ধরে তখন বোঝাই যায় দেশ কোন দিকে যাবে।
সুতরাং আমরা যদি একটি বেকারমুক্ত একটি শক্তিশালী জাতি গঠণ করতে চাই তবে আমাদেরকে আমাদের শিশুদেরকে সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে। যে বাচ্চাটি ছোট বেলা থেকে এভাবে Challenging পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে প্রতিযোগীতার মোকাবিলা করতে করতে তার শৈশব, কৈশর পার করে যৌবনে পা দেয়, চাকরীযুদ্ধে তাকে হারানো অনেক কঠিন হয়ে যায় তখন। আর তবুও যদি সে চাকরীযুদ্ধে কোন কারণে হেরে যায় তবে সে তখন দমে না গিয়ে নতুন ভাবে আত্মপ্রকাশ করে উদ্যোক্তা হিসেবে এবং পরিণত হয় দেশের উল্লেখযোগ্য একজন শিল্পপতিতে। তাই এ ক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের প্রতি আমার আহবান, আপনি আপনার সন্তানদেরকে ছোটবেলা থেকে ঠিক যে পরিবেশে যেভাবে মানুষ করবেন, সে ঠিক তেমন Quality নিয়েই বড় হয়ে উঠবে। আপনি যদি আপনার সন্তানদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন যে, সে বড় হয়ে অনেক বড় একটি অবস্থানে পৌছাবে তবে ছোট বেলা থেকেই সেই স্বপ্নটির বীজ আপনার সন্তানের মধ্যে বপন করে দিন। তাকে উচ্চাকাংক্ষী করে গড়ে তুলুন। পৃথিবীর কঠিন নিয়ম-কানুন ও প্রতিযোগীতার ব্যাপারে তাকে জানান। সন্তানকে কখনো আদরে আদরে ননীর পুতুল করে রাখবেন না। তার উপর ঝড়-ঝাপটা আসতে দিন, সেগুলোকে তাকে নিজে থেকে মোকাবিলা করতে দিন। জীবনের প্রতিটি কঠিন সময়ে তার পাশে থাকুন। তাদেরকে সাহস দিন, অনুপ্রেরণা দিন। তাদেরকে পরিশ্রমী করে গড়ে তুলুন। তাদের মধ্যে Soft Skills ও Hard Skills গুলোকে তৈরী করুন। তাদেরকে হারতে নয়, জয়ী হতে শেখান। তবেই, দেখবেন আপনার সন্তান চাকরী পাক বা না পাক; সে কখনো বেকার বসে থাকবে না। সে এই কঠিন পৃথিবীতে নিজের একটি অবস্থান ও পরিচিতি তৈরী করে নিবেই, যার কারণে সারা বিশ্ব একদিন তাকে অমর করে রাখবে।