How We Can Remove Suicidal Tendency
আত্মহত্যা আমাদের দেশের যুবসমাজের মধ্যে একটি মরণব্যাধি। যতই দিন যাচ্ছে এর পরিমাণ ততই বেড়ে চলেছে। তবে আত্মহত্যা যে শুধু মাত্র যুবসমাজ বা শিক্ষার্থীদের মধ্যেই বেশী তা কিন্তু নয়। অনেক পূর্ণবয়স্ক মানুষও আক্তান্ত হচ্ছে এই ব্যাধিতে। সব মিলিয়ে যদি আমরা সর্বস্তরের মানুষদের আত্মহত্যার কারণ গুলো খুঁজে বের করতে চাই তবে আমরা যা পাবোঃ
ছেলে-মেয়েদের আত্মহত্যার কারণ হচ্ছে বাবা-মায়ের সাথে ঝগড়া, বন্ধুদের সাথে ঝামেলা, প্রেমে ব্যর্থতা, পরীক্ষার ফেল, বেকারত্ব, নেশায় আসক্ততা, রাগ, অভিমান বিষন্নতা ইত্যাদী। আর পূর্ণবয়স্ক মানুষদের আত্মহত্যার কারণ গুলো হচ্ছে, সংসারে অশান্তি, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া, অফিসের ঝামেলা, চাকরী চলে যাওয়া, ক্যারিয়ারে ব্যর্থতা ইত্যাদী। আবার অনেকেই আছে যার আত্মহত্যা করার সঠিক কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই তো কথায় আছে, যে আত্মহত্যা করে, তার সাথে সাথে আত্মহত্যার কারণ গুলোও পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায়।
আত্মহত্যা সব যুগে সব সময়ই মানুষের জন্য অন্যতম একটি সমস্যা হলেও বর্তমানে এটি মূলত গুরুত্বপূর্ণ আকার ধারণ করেছে। আমরা সকলেই জানি যে আমরা বর্তমানে একটি কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। মানুষের হাতে কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই, বাহিরে যাবার সুযোগ নেই, পাশে কথা বলার মানুষ নেই, অনেকের পরিবার সাথে নেই ইত্যাদী নানান রকম সমস্যা নিয়ে আজ মানুষ গৃহবন্দি। লকডাউনের যতই দিন বাড়ছে মানুষের অবস্থা ততই খারাপের দিকে যাচ্ছে। বাহির থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই কিন্তু আপনার আশে পাশেই অনেক মানুষ রয়েছে যারা নানান কারণে মানসিকভাবে প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়েছে। আর এই সকল মানুষেরই শেষ পরিণতি হচ্ছে আত্মহত্যা। এইতো কিছু দিন আগেই খবরে এসেছিল বগুড়ার একটি পরিবারে পারিবারিক কলহে একসাথে বিষপানে মা ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে আত্মহত্যা করেছে। আবার সম্প্রতি খবরে এসেছে বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপূত নিজ ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেছে। আমরা যদি এই দুটি কেস স্ট্যাডি করি তবে আমরা বর্তমানে আত্মহত্যার পিছনে প্রধাণ গুরুত্বপূর্ণ ২টি কারণ খুঁজে পাবো।
মানুষ এখন দীর্ঘসময় ধরে ঘরে তার পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছে। আগে এটি অনেক মধুর একটি ব্যাপার হলেও বর্তমানে এটি বরং শাপে বর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি লকডাউনের কারণে অনেক পরিবারেই আগের মত সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থা নেই কারণ মানুষের চাকরী নেই, খাবার নেই, বাহিরে শান্তি নেই। যার কারণে মানুষের মনে রাগ, ক্ষোভ, অশান্তি পুঞ্জিভূত ভাবে বিরাজ করছে আর যখন সংসারে কোন বিষয় নিয়ে একটু ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি হচ্ছে তখনই তাদের মনের ভিতর জমে থাকা সকল রাগ ও ক্ষোভ এক সাথে বেরিয়ে আসছে যার একটি ফলাফল হচ্ছে আত্মহত্যা। আর এ কারণে পরিবারের মত একটি নিরাপদ স্থানও আজ মানুষের জন্য বিষাক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে যারা পরিবারের সাথে নেই বরং লকডাউনের সময়টিতে একাকী বসবাস করছে তারা ভুগছে বিষন্নতায়। এ সব মানুষের আশে পাশে কথা বলার কোন মানুষ নেই, হাতে কোন কাজ নেই, বাহিরে যাবার সুযোগ নেই তাই এদের মনেও কোন শান্তি নেই। এদের যতই অর্থ, সুনাম, খ্যাতি, বাড়ি, গাড়ি থাকুক না কেন একমাত্র মনের মাঝে শান্তি না থাকার কারণে আজ তাদেরকে বেছে নিতে হচ্ছে আত্মহত্যার মত একটি পথ।
এই ব্যাধিকে মোকাবিলা করার জন্য একটাই পথ হচ্ছে মানুষের সাথে যোগাযোগ ও ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা। একটি পরিবারের সকল সদস্য, বিশেষ করে যারা বড়রা আছে তাদের এখন প্রধান দ্বায়িত্ব হচ্ছে সংসারে সকলের মাঝে শান্তি স্থাপন করা। তাদের একটি ব্যাপার মনে রাখতে হবে যে এখনকার সময়ের ছেলে-মেয়েদের মন খুবই নাজুক হয়। তারা অল্পতেই খুব ইমোশোনাল হয়ে বিভিন্ন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে তাই প্রতিটি বাবা-মায়ের দ্বায়িত্ব হচ্ছে তার সন্তানদেরকে সঠিকভাবে দেখে রাখা যেন তারা এই সময়টিতে কোন ভাবেই বিষন্নতার মধ্যে দিয়ে পার না হয়। ছেলে-মেয়েদেরও উচিত এই সময়টিতে নানান রকম ক্রিয়েটিভ কাজে নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখা যেমন অনলাইনে পড়াশোনা করা, অনলাইন কোর্স করা, চাকরীর বাজারের জন্য নিজের দক্ষতাগুলোকে বাড়ানো, নতুন নতুন স্কিল শেখা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি নেয়া, সরকারী চাকরির জন্য পড়াশোনা করা ইত্যাদী। যেহেতু বাহিরে যাবার কোন সুযোগ নেই তাই বিনোদনের জন্য তারা দেশ বিদেশের নানান রকম বই পড়তে পারে, মুভি দেখতে পারে, ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতে পারে। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম ও নামাজ পড়ার অভ্যাস তৈরীর মাধ্যমে তারা খুব সহজেই নিজেদের শরীর ও মনকে সতেজ ও পবিত্র রাখতে পারে। অবসর সময়ে পরিবারের সবার সাথে আড্ডা দেয়া, ভাই-বোনদের সাথে নানান রকম ঘরোয়া খেলার আয়োজন করা, বাবা-মায়ের সাথে গল্প করা, সকলে একসাথে বসে খাওয়া-দাওয়া করা এই সব কিছু দ্বারা খুব সহজেই পরিবারের মধ্যে একটি সুন্দর পরিবেশ ও সম্পর্ক বজায় রাখা যায়। আর এমন একটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কোন অবস্থাতেই কোন ধরণের বিষন্নতা প্রবেশ করতে পারে না।
পাশাপাশি শুধু নিজ পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে বরং আশে পাশে প্রতিবেশী যারা রয়েছে তাদেরও নিয়মিত খোঁজ খবর নেয়া উচিত। এমনও হতে পারে, আপনারই পাশের বাসায় কেউ একা একা থাকার কারণে বিষন্নতায় ভুগছে। এ সকল মানুষদের সাহায্যের প্রয়োজন। সকলে যদি প্রত্যেকের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে নিয়মিত কথা বলে ও যোগাযোগ রাখে তবে খুব সহজেই দূরে থেকেও সকলে একটি পরিবারের মত এক সাথে থাকার আনন্দ লাভ করতে পারে। প্রযুক্তির এই যুগে দূরের মানুষদের সাথে যোগাযোগ রাখা ও অনলাইনে কথা বলা এখন পানি পানের মতই সহজ কাজ। এভাবে আপনজনদের সাথে যোগাযোগ ও নিয়মিত খোঁজ-খবর নেয়ার মাধ্যমে নিজের মনে এক অন্যরকম শান্তি পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি সেই আপনজনটি যদি একা থাকে তবে সেও এটা ভেবে নিশ্চিন্ত হতে পারে যে, এই বিপদের সময় কেউ একজন তার পাশে আছে তাকে সাপোর্ট দেবার জন্য।
মানুষ জাতি যেমন শক্তিশালী ঠিক তেমনই দুর্বল। একটু সাপোর্ট পেলে যেমন তারা বিশ্ব জয় করতে পারে, তেমনি একটু সাপোর্টের অভাবে পারে নিজের জীবন শেষ করে দেবার মত ভয়ংকর কাজ করতে। তাই এই কঠিন সময়ে আমাদের উচিত নিজেকে সাপোর্ট দেয়া এবং আমাদের আশে পাশের মানুষদেরকে সাপোর্ট দেয়া। আর এভাবে একত্রে মিলেমিশে থাকার মাধ্যমেই আমাদের পক্ষে সম্ভব আত্মহত্যার মত একটি ব্যাধিকে মোকাবিলা করে করোনা পরবর্তী একটি সুন্দর ভবিষ্যত তৈরী করা।